পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

83 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড পাকিস্তানের মাথামোটা গোঁয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আর তার জঙ্গী সরকারের অপপ্রচামুখর মুখে বিরাট একটা চপেটাঘাত মারার মতো জওয়াব শোনা গেল গোষ্ঠীনিরপেক্ষ যুগোশ্লাভীয় প্রেসিডেন্টের দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে। তিনি বলেনঃ বাংলাদেশ প্রশ্নটি ভারত-পাকিস্তান প্রশ্ন নয়। এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কোন বিষয় নয়। তিনি বলেনঃ এটি পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারও নয়। সপ্তাহব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগে গত সপ্তাহে মার্কিন টেলিভিশন সংস্থা সি, বি, এস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট টিটো অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বিশ্বাবাসীকে এই সত্যটি জানিয়ে দিয়েছেন।... ৬ নভেম্বর, ১৯৭১ সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায় বাংলাদেশ পরিস্থিতি তথা বাংলাদেশের বর্তমান ঘটনাবলী ও প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে এক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এই রিপোর্টে পাক হানাদার বাহিনী অধিকৃত ঢাকা নগরীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিকৃত এলাকার একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টার ঢাকা থেকে পাঠানো এর রিপোটে বলেছেনঃ বাংলাদেশে পাকিস্তানী সামরিক অভিযান শুরুর পর সাত মাস কেটে গেছে কিন্তু এখনও কোথাও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। বাংলাদেশের প্রত্যেক শহর-বন্দরের জনসংখ্যা বিগত ২৫ শে মার্চের আগে যা ছিলো এখন তার শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ হাস পেয়েছে। এই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের কিছু অংশ সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে, কিছু লোক নিখোঁজ হয়েছে এবং বাকী সকলে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে লড়াই করছে। নিউইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টে বলা হয়ঃ পাকিস্তানী সৈন্যরা মুক্তি বাহিনীকে খতম করবে বলে যে দুরাশা পোষণ করেছিলো তা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বরং ফল উল্টো ফলতে শুরু করেছে- বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাকিস্তানী সৈন্যরা মুক্তিবাহিনীর হাতে দারুণ মার খাচ্ছে। মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণাত্মক পরিকল্পনাগুলো ব্যর্থ হচ্ছে। লড়াইয়ে তারা তারা কোনোক্রমেই সুবিধে করে উঠতে পারছে না। জলে-স্থলে সর্বত্রই তারা মুক্তিবাহিনীর হাতে মার খাচ্ছে। পাকিস্তানী সৈন্যদের এখন একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো কয়েকটি ক্যান্টমেন্ট। নিউইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্টার লিখেছেনঃ বাংলাদশের বহু বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর অধিকার ও প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফরিদপর, রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই রিপোর্টার লিখেছেনঃ বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকাগুলোয় ব্যাপক হত্যা, লুটতরাজ, নারী নির্যাতন ও ধ্বংসের দ্বারা পাকিস্তানী সৈন্যরা যে বিভীষিকা ও ত্রাসের সঞ্চার করেছিলো তা এখন হ্রাস পেয়েছে। মুক্তিসেনারা এখন দেশের শহরে বন্দরে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। বর্তমানে বাঙালীদের মনে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর ঘৃণা দারুণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে সামরিক অভিযানের পর প্রথমদিকেও এতখানি ঘৃণা ছিল না। পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী অসামরিক প্রশাসনে নিযুক্ত বাঙালী এবং সাধারণ বাঙালীদের ওপর এখনও চরম নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। একজন বাঙালী একজন বিদেশী সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছিলো-শুধু এই অপরাধেই পাকিস্তানী সৈন্যরা ওই বাঙালী ভদ্রলোকের পরিবারের সকলকে নির্মমভাবে প্রহার করেছে। কিন্তু এত করেও তারা মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠছে না। নিউইয়র্ক টাইমস-এর সংবাদদাতা লিখেছেনঃ মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ প্রশ্নটিকে অন্যদিকে ঘোরানোর উদ্দেশ্যে ভারত সীমান্তে ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ করেছে। ভারতীয়