পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

84 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড বাহিনীর সঙ্গে একটা সংঘর্ষের মাধ্যমে তারা বিষয়টিকে ভারত-পাকিস্তান বিরোধ বলে চালাবার চেষ্টায় আছে। এই উদ্দেশ্যে পাকিস্তান বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ করেছে। ফলে বাংলাদেশের শহরে-বন্দরে পাকিস্তানী সৈন্যদের বর্বরতা, সন্ত্রাস ও দৌরাত্ম্য কমে গেছে।... ১২ নভেম্বর, ১৯৭১ ... সম্প্রতি সোভিয়েট ইউনিয়নের সুপ্রীম সোভিয়েটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিঃ ভি, কুদরিয়াভেৎসেভ বাংলাদেশের এই যুদ্ধকে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন-বাংলাদেশে আজ যে লড়াই চলেছে তা খাঁটি জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের জঙ্গী সরকার তথা বর্বর সমর নায়করা বাংলাদেশে গণহত্যা, ধ্বংস আর চরমসন্ত্রাসের নীতির দ্বারা বাঙালীদের জাতীয় মুক্তিযুদ্ধকে তুরান্বিত করেছে। তিনি বলেনঃ আমি আশা করি এই বাস্তব ঘটনা যত তিক্ত ও যতো কঠোরই হোক না কেন পাকিস্তান এটা উপলব্ধি করে সুবুদ্ধির পরিচয় দেবে। সম্প্রতি সোভিয়েট পার্লামেন্টারী প্রতিনিধিদলের নেতা হিসেবে ভারত সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মিঃ কুদরিয়াভেৎসেভ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম সম্পর্কে এই মন্তব্য করেন। বিশিষ্ট সোভিয়েট নেতার এই উক্তিরই আরও স্পষ্ট প্রতিধ্বনি উঠেছে ফরাসী দেশে। ফ্রান্সের লোকবরেণ্য নেতৃবর্গ আজ মনে করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ এক অবশ্যম্ভাবী সত্য। এ সত্যকে অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাবার কোনো পথ নেই, পন্থাও নেই। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জর্জেস পপিদু নিজেই বলেছেনঃ বাংলাদেশ সংকটের মূল হচ্ছে রাজনৈতিক, অতএব বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছানুযায়ী এ সঙ্কটের সমাধান করতে হবে। তা না হলে সমগ্র উপমহাদেশে বিপর্যয়ের ঝড় নেমে আসবে এবং যার পরিণতি ভাবা দারুণ কঠিন ব্যাপার। বর্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ব্যাপক গণহত্যা, লুটতরাজ ও পৈশাচিকতার ফলেই বাংলাদেশ থেকে ৯৬ লক্ষ অসহায় নরনারী-শিশু বৃদ্ধ তাদের বাড়িঘর-সহায় সম্পদ হারিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাংলাদেশকে একটি বধ্যভূমিতে পরিণত করেছিলো। ংলাদেশে এই ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টির জন্যে পাকিস্তানের জঙ্গীশাহী তথা জঙ্গী সমরনায়করাই দায়ী। আর ঠিক এই কারণেই সোভিয়েট কমিউনিষ্ট পার্টির মুখপত্র প্রাভদা'য় পাকিস্তানী জঙ্গী সরকার ও সামরিকজান্তাকে হুশিয়ার করে বলা হয়েছেঃ বাংলাদেশের যে নব্বই লক্ষাধিক শরণার্থী তাদের সহায়-সম্পদ ঘরবাড়ি এবং স্বদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, তারা যাতে পূর্ণ মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে স্বদেশে ফিরে আসতে পারে তার উপযুক্ত অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে। পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার সঙ্গে তারা যাতে স্বদেশে ফিরে আসতে পারে তেমন অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে। প্রাভদায় বলা হয়, ইয়াহিয়ার জঙ্গীশাহীই শরণার্থী সমস্যার সৃষ্টি করেছে এবং এ সমস্যা আজ এক জটিল আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিনত হয়েছে। পাকিস্তানের মাথাগরম জঙ্গীচক্র যুক্তিতর্ক বিসর্জন দিয়ে তাদেরই সৃষ্ট সমস্যার জন্যে গোঁয়ারের মতো ভারতের ঘাড়ে দোষ চাপাবার চেষ্টা করছে। ২৪ নভেম্বর, ১৯৭১ ... গত রাতে বিবিস’র এক বিশেষ সংবাদ বুলেটিনে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা ও সাংবাদিকদের পাঠানো রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়ঃ মুক্তি বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে গত ৪৮ ঘন্টায় পাকিস্তান তার দশটি সামরিক ঘাঁটি হারিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা পশ্চিম খণ্ডে মোট বাইশটি সীমান্ত চৌকির মধ্যে একুশটি দখল করেছে। গত রাতে ঢাকা থেকে বিবিসি’র বিশেষ সংবাদদাতা মিঃ রোনাল্ড রোবসন জানাচ্ছেনঃ মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা এখন যশোরের চৌগাছা থেকে যশোর বিমান বন্দরের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর