পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

95 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড আন্দোলনের মধ্যমণি ছিল। আর সে আন্দোলনের সঙ্গে ইলা মিত্রের নামও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।”... সরদার ফজলুল করিম আরও লিখেছেনঃ “ইলা মিত্রের গ্রেফতার এবং তার উপর অনুষ্ঠিত নির্যাতন তখনকার সংগ্রামের উপকথায় পরিণত হয়েছিল। সে কাহিনীর ভিত্তিতে শহীদ সাবের তাঁর ‘শোকার্ত মায়ের প্রতি কবিতাটি রচনা করেন।” সংক্ষেপে এই হল শহীদ সাবেরের সেই বিখ্যাত কবিতার পটভূমি। তাঁর মনে পড়েছিল হিটলারের ফ্যাসিস্ট বাহিনীর অত্যাচারের কথা। কিন্তু যে কারণে আমি বিস্ময় বোধকরি, তা হল শহীদ সাবেরের সেই কবিতায় ইয়াহিয়ার খুনী জল্লাদ সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নারী নির্যাতন ধর্ষণ, অপহরণ, খুন সবই প্রতিফলিত হয়েছে বিস্ময়কর ভাষায়। কবিরা নাকি ভবিষ্যৎ দেখতে পান। দেখতে পেয়েছিলেন শহীদ সাবেরও। সবচাইতে বড় কথা সেই ফ্যাসিস্ট নির্যাতনের শিকার হলেন কবি নিজেই। এমন করে নিজের ভবিষ্যৎ আর কোনও কবি দেখেছেন কি? আছে কি বিশ্বে কোনও উদাহরণ? না নেই- শুধু আছে এই বাংলাদেশে। শহীদের সেই কবিতার ভাষা তাই কান্নায় সিক্ত, ঘৃণায় ঘৃণায় উচ্চকিত, ছন্দে ছন্দে উচ্ছসিত, পাশব শক্তির ঘৃণ্যতম অত্যাচারের কথা এমন কোরে কেউ কখনও প্রকাশ করেনি।... কবিতাটির প্রথম অংশে দেখা যাচ্ছে একজন জার্মান ফ্যাসিস্ট ক্যাপ্টেন ভের্নের গর্ভবতী একজন রুশ মহিলাকে উলঙ্গ করছে। কারণ, সেই রুশ মা ছিলেন গেরিলা দলের সদস্যা। তাই এই নির্মম অত্যাচার। শহীদ মাগো, মা আমার কাঁদছো তুমি? দেখো, আমি স্থির, আটল, চোখের পাতাটি নড়ছে না। কারা-প্রাচীরের অন্তরালে, লুকিয়ে আনা বইটি। এখন আমার চোখে ভেসে উঠেছে সেতো তোমারি ছবি মাগো। কি সেই ছবি? ছবিটা দেখুন। চারদিকে রক্ত-জমানো হিমেল মৃত্যু মাগো ক্যাপ্টেন ভের্নের কি বুঝবে বলো? কেন তুমি যোগ দিয়েছ গেরিলা দলে? স্বদেশ প্রেমের আগুন কত জুলে পররাষ্ট্র লোভী নাৎসীরা কি বুঝবে তা। না, শুধু হিটলারের ফ্যাসিষ্ট বাহিনী নয়। বোঝেনি ইয়াহিয়ার ফ্যাসিস্ট জল্লাদ সেনারাও। শহীদ সাবের তারপর লিখেছেন দ্বিতীয় দৃশ্য। ফ্যাসিস্টরা ধরে নিয়ে গেছে গর্ভবতী মাতাকে। পথেই তার সন্তান হল। মায়ের কোল থেকে দস্যরা কেড়ে নিলে নবজাতককে। তারপর আমি দেখছি পরিষ্কার সেই হাড় কাঁপানো শীতের রাতে, সেই দুঃসহ শীতে