পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|0| বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড হিংস্র পশুদের খাঁচা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল বাংলার শ্যামল প্রান্তর আর জনপদে। লোভী, বিবেকহীন পশুর দল দিকদিশাহীনভাবে চালিয়েছে অত্যাচার, হনন আর সন্ত্রাসের রাজত্ব। কিন্তু তারপর? কল আর রক্ষা হয় না। চারিদিক থেকে আঘাত হানছে বাংলার মানুষ। পথে-ঘাটে, হাটেবাজারে, শহরে-বন্দরে, জলে-স্থলে, যেখানেই সুযোগ পাচ্ছে, অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে তাদের খতম করছে। এখন শয়তানদের পথ চলতে ভয়, ঘরের মধ্যেও নেই স্বস্তির আশ্রয়। এজন্যেই নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্যে এবং মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য রাইফেল দেখিয়ে টেনে নিয়ে আসছে খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষকে। তাদের আড়ালে এগিয়ে আসছে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখে। কিন্তু এতেও কুল রক্ষা হচ্ছে না। তীক্ষ্ণধী, সদজাগ্রত বাংলার প্রহরী মুক্তিবাহিনী তাদের কৌশল ধরে ফেলেছে। পাল্টা এমন আঘাত হানছে যে দসু্যর দল পরি কি মরি করে পালাতে দিশা পাচ্ছে না। রাতের অন্ধকারে গা মিশিয়ে এসে মুক্তিবাহিনী আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের উপর, তাই কোন কিছুতেই বিশ্বাস নেই। নদী দিয়ে পানা ভেসে যাবে ওদের সামনে দিয়ে? যাদি মুক্তিবাহিনী হয়? মেশিনগানের গুলি চলে পানার ওপর। রাতের অন্ধকারে শিয়াল-কুকুরেরও ওদের সীমানা দিয়ে যাওয়ার উপায় নাই। হত্যাকারীদের ধারণা, মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা যেকোন রূপ ধারণ করতে পারে-অতএব দৃশ্যগোচর কোন কিছুকেই ক্ষমা নেই। রাতের বেলায় মুক্তিবাহিনীর গুলির শব্দ পেলে সে পথে তারা হাঁটে না। প্রথমে তাদের পরম ভৃত্য একবার রাতের বেলায় গেরিলারা একজন পাক দালালের বাড়ি ঘেরাও করে তাকে হত্যা করে। দালালের এক শুভানুধ্যায়ী উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে যায় পার্শ্ববর্তী জল্লাদবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে। খবর দেয়, ‘হুজুর, অমুককে মুক্তিবাহিনী এসে মেরে ফেলল। এখনো ওরা আছে, রাজাকারদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। কাপুরুষ পশুপ্রবর, খেকিয়ে উঠে বলল, ‘হাম কিয়া করেগা। মুক্তিফৌজ আয়া হ্যায়, তুম লোগ যা কর হঠা দো। আভি হাম নেহি যায়েগা, সুবাহ মে যায়েগা। নিরাশ হয়ে ফিরে এলো দালালের সাগরেদ। এখন ফল হয়েছে অন্যরকম। এখন বরং পশুগুলো এলে এইসব ঘা খাওয়া মানুষগুলোই এসে খবর দেয়, ‘ওরা এসেছে। তাদের সংখ্যা এবং শক্তি সমস্তই পুংখানুপুংখরূপে জানিয়ে দেয় মুক্তিবাহিনীকে। যারা নেহাৎই প্রাণের দায়ে শান্তি কমিটির সদস্য হয়েছিল বা রাজাকারে নাম লিখিয়েছিল, আজ তারা সর্বতোভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত। শুধু তাই নয়, মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড মারের সামনে টিকতে না পেরে দলে দলে রাজাকার আত্মসমর্পণ করছে। জংগীশাহীর জঘন্যতার রূপটাও ফাঁস করে দিচ্ছে। আজ স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়ে গেছে ভাড়াটে সৈন্যের চেয়ে হাজার গুণ শক্তিশালী দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সৈনিক। আমাদের গেরিলারা আজ তাই হয়ে উঠেছে অজেয়, দুর্বার। আর পক্ষান্তরে এবং মুক্তিবাহিনীর সাম্রাজ্য বাসনা ঘরের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। দুঃসাহসী গেরিলাদের এবং মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে খতমকৃত জালেম বাহিনীর অফিসারের জন্য আর কতো কতো কাটের বাক্স লাগবে, তার খতিয়ান কি করছে ইয়াহিয়া খান? (মুস্তাফিজুর রহমান রচিত)