পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

106 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড লিখবো? আমরা লিখলে তো তা হবে হাই সঙ্গীত, জসীম সঙ্গীত... লজ্জায় অপমানে অগ্নিশৰ্মা হয়ে উঠলেন গভর্নর। জারি করলেন দ্বিতীয় নির্দেশ- বাংলা ভাষাকে ইসলামী রূপ দিতে হবে। এবার জবাব দিলেন অবিভক্ত বাংলার খ্যাতনামা রাজনীতিক- মুখের উপর চীৎকার করে বলেছিলো বাংলার ছাত্র-তরুণের দলনা। তোমার কথা মানি না। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। বিদ্রোহী বাঙালীর সেই কণ্ঠস্বর নূরুল আমিনের মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্ৰীয় মর্যাদার স্বীকৃতি আদায় করে এনেছেন। রক্তের অক্ষরে লিখিত হয়েছে বাংলাভাষা আর বাঙালীর বিজয়গাথা। কিন্তু পশ্চিমা শাসকের দল কোনদিন এই সত্যকে সহজভাবে স্বীকার করে নিতে পারেনি। বাংলা আর বাঙালী কথা দুটি ওদের অনুভূতিতে প্রতিনিয়ত ছড়িয়েছে বৃশ্চিক দংশনের জ্বালা। তাই অবিরাম হামলা পলেছে বাঙালী জাতির উপর-বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাঙালী, সংস্কৃতির ওপর। ওরা আরবী হরফে বাংলা ভাষা লিখতে চেয়েছে, হাওয়াই হামলা করেছে, ভাষাটাকে মুসলমানী চেহারা দেবার জন্য তার মাথায় টুপি পরিয়ে দিয়েছে। কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে করা হয়েছে তাহজিব-তমদ্দুন নজরুলের কবিতায় ‘শ্মশান কেটে করা হয়েছে ‘গোরস্থান’। কায়কোবাদের লেখা মহাশ্মশান বইখানির নাম পাল্টিয়ে রাখা হয়েছে ‘মহা-গোরস্থান’। কিন্তু কি লাভ? মিঃ জিন্নাহ থেকে মোনেম খাঁ যা পারেনি-ইয়াহিয়া-টিক্কাও তা পারবে না। ইতিহাসের গতি পশ্চাদমুখী নয়, ঘড়ির কাটা পেছনের দিকে ঘোরে না। সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুখের ভাষা আর তাদের অসাম্প্রদায়িক জাতীয়বাদী চেতনাকেও কেউ জোর করে হত্যা করতে পারবে না। ৩০ জুলাই, ১৯৭১ একটি বিদেশী বার্তা প্রতিষ্ঠানের খবরে জানা যায় যে, এবারে পাকিস্তানী সামরিক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় রেডিও বাজেয়াফত করতে শুরু করেছে। অপরাধ? সেখানকার মানুষ শত্ৰকবলিত ঢাকা বেতারের কোন অনুষ্ঠান শোনে না-তারা শোনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি, আকাশবাণী ও ভয়েস অব আমেরিকার অনুষ্ঠান। খবরটি ছোট্ট হলেও তাৎপর্যপূর্ণ। বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয় যে, অধিকৃত এলাকার জনগণকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং বিশ্বজনমত সম্পকে অন্ধকাকে রাখবার জন্যই জঙ্গীশাহী রেডিও বাজেয়াফত করতে শুরু করেছে। আর এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশে হানাদারদের নাজেহাল অবস্থারই স্বীকৃতি পাওয়া যায়। যুদ্ধের সবচাইতে বড় বলি হচ্ছে সত্য। মারণাস্ত্র মানুষের জানমালের মত সত্যকেও নির্দয়ভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জঙ্গীশাহীও তাই করেছে। প্রকৃত ঘটনা যাতে কেউ জানতে না পারে সেজন্য সংবাদপত্রের উপর কড়া সেন্সরশীপ আরোপ করা হয়েছে। অধিকৃত এলাকায় বর্তমানে যেসব সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় তাতে প্রকৃত ঘটনার কোন বিবরণ থাকে না, নিরপেক্ষ সত্যনিষ্ঠ মতামত প্রকাশের কোন সুযোগ সেখানে নেই। প্রতিটি শব্দ ছাপা হবার আগে সামরিক কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। সব কাগজে একই খবর ও মন্তব্যের কার্বন কপি ছাপা হয়। ফলে সংবাদপত্র নামে যে কাগজগুলি অধিকৃত এলাকায় প্রকাশিত হয়, তা বস্তুত সংবাদপত্র নয়- জঙ্গীশাহীর প্রচার বুলেটিন মাত্র। তাই সেগুলো কেউ কেনে না, পড়ে না। জালেমশাহীর প্রচার দফতর ওগুলো বিনামূল্যে বিলি করে। এইতো গেল সংবাদপত্রের কথা। এরপর থাকে রেডিও। এবং সেটাই আজকের দিনের সবচাইতে শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম। ঢাকা বেতারকেন্দ্র এখন শত্রবাহিনীর দখলে। শত্রকবলিত এই বেতারযন্ত্রটি থেকে যা প্রচারিত হয়, তা জঘন্য জালিয়াতি আর মিথ্যার বেসাতি ছাড়া কিছুই নয়। জল্লাদ বাহিনীর বর্বর অত্যাচারের