পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

108 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ১৭ আগষ্ট,১৯৭১ তিনটি খবর। তিনটি খাবরের উৎসস্থল দূর-দূরান্তরে তিনটি জায়গা-করাচী, নয়াদিল্লী, ওয়াশিংটন। অথচ খবর তিনটি একই সূত্রে গাথা-একই লোককে কেন্দ্র করে। আর তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। করাচী থেকে ফরাসী বার্তা প্রতিষ্ঠান এ-এফ-পি জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান আত্মপক্ষ সমর্থনে অস্বীকৃত জ্ঞাপন করায় পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক আদালতে তার বিচার স্থগিত হয়ে গেছে। অপরাধই করিনি। তাই বিচার বা আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রশ্নই ওঠে না। নয়াদিল্লীতে মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী বলেছেন, তিনি সর্বপ্রথম শেখ মুজিবের মুক্তিদানের শর্তে বাংলাদেশের সমস্যার একটি রজনৈতিক সমাধানের পক্ষপাতী। বঙ্গবন্ধুর গোপন বিচারের তীব্র নিন্দা করে সিনেটর কেনেডী বলেন, শেখ মুজিব যদি কোন অপরাধ করে থাকেন তা হচ্ছে এই যে, তিনি একটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। যেভাবে গোপনে তা বিচার হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতির চূড়ান্ত বরখেলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। অপরদিকে জাতিসংঘে জঙ্গশাহীর রাষ্ট্রদূত আগা হিলালী বলেছে যে, শেখ মুজিবের গোপন বিচার প্রত্যক্ষ করার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয়া হবে না। আগা হিলালী আরও বলেছে যে, বঙ্গবন্ধুর বিচারকারী মিলিটারী কোর্টের রায় যাই হোক না কেন, তাকে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করা হবে না। রায়ের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর দণ্ডাদেশ বাতিল বা হ্রাস করতে পারবে। খবরগুলো পাশাপাশি রেখে এগুলোর তাৎপর্য লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, শেখ মুজিবকে জল্লাদ বাহিনী এখনও হত্যা করেনি- করতে পারবেও না। কারণ সে শক্তি ওদের নেই। তাই বঙ্গবন্ধুর বিচারের প্রহসন মঞ্চ সাজিয়ে সমগ্র বিশ্বকে ভীতসন্ত্রস্ত করে নরঘাতক ইয়াহিয়া চেষ্টা করছে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে। বঙ্গবন্ধুর অমূল্য জীবনকে বাজি রেখে সে নেমেছে বাংলার স্বাধীনতার যুদ্ধ বানচালের জুয়াখেলায়। কিন্তু ইয়াহিয়া খান আবার ভুল করেছে- আবার ভ্রান্তির বালুচরে পা আটকে গেছে তার। ইয়াহিয়া স্বীকার না বশে আনার। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর মাথা সে কিনতে পারেনি। আর পারেনি বলেই শেষ অস্ত্র নিক্ষেপের মত হুঙ্কার ছেড়েছে-আমি শেখ মুজিবের বিচার করবো, তাকে ফাঁসিতে ঝুলাবো। এর পিছনে এক সুচতুর লক্ষ্য ছিল ইয়াহিয়া খাঁর। সে ভেবেছিল, শেখ মুজিবকে হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে বশে আনা যাবে, মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া যাবে, আর যাবে বিশ্বজনমতকে বিভ্রান্ত করা। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হয়েছে জল্লাদী প্রচেষ্টা। ভয় পাবার পরিবর্তে আরও বলিষ্ঠকণ্ঠে বঙ্গবন্ধু বলেছেন: আমি কোন অপরাধ করিনি। সুতরাং বিচার বা আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রহসন মুলতবি রাখতে হয়েছে। এই বিচার আর হত্যার হুমকি মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল এতটুকু দমাতে পারেনি। বরং শেখ মুজিবের নির্দেশিত পথে দ্বিগুণতর শক্তি নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে দুশমনের ওপর-আরও ত্রিশঙ্কু অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হয়েছে হানাদার বাহিনী। আর বিশ্বজনমত বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে ইয়াহিয়া খানের। এইতো গতকাল সিনেটর কেনেডী বলেছেন শেখ মুজিবের একটিমাত্র অপরাধ যে তিনি নির্বচনে জয়লাভ করেছেন। তার গোপন বিচার আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতির চূড়ান্ত বরখেলাপ মাত্র। বস্তুতঃ এ কথা কেনেডীর একার কথা নয়। কেনেভীর কণ্ঠে বিশ্ববিবেকের দ্ব্যর্থহীন রায়ই ধ্বনিত হয়েছে। আর সে ক্ষমাহীন নিয়তির মত জানিয়ে দিয়েছে যে, অপরাধী শেখ মুজিব নয়- ইয়াহিয়া