পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

109 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড খান। যুদ্ধ শেখ মুজিব শুরু করেননি-ইয়াহিয়া খানের গণহত্যা অভিযানের জবাবেই সৃষ্টি হয়েছে রক্তাক্ত সংঘর্ষের। আর তাই সমস্যার সমাধানের শর্ত হচ্ছে শেখ মুজিবের মুক্তি। কেনেডীর এই বক্তব্যের আরেকটি তাৎপর্য আছে। কেনেডীদের বলা হয়ে থাকে মার্কিন বিবেকের কণ্ঠস্বর। আর সে কারণেই বলা যায়, কেনেডীর বক্তব্য পৃথিবীর আর দশটি দেশের মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোটি কোটি শান্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকামী মানুষেরই বক্তব্য। সুতরাং দেখা যায়, যে দেশের অস্ত্র দিয়ে ইয়াহিয়া বাঙালীদের হত্যা করেছে, শেখ মুজিবকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে সেই আমেরিকার জনগণের দৃষ্টিতেও ইয়াহিয়া দোষী, শেখ মুজিব নির্দোষ। জল্লাদ ইয়াহিয়ার রাষ্ট্রদূত আগা হিলালী বলেছে, বিচারের রায় যাই হোক সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হবে না। তার দণ্ডাদেশ বাতিল বা হাসের ক্ষমতা থাকবে ইয়াহিয়ার। চমৎকার ব্যবস্থা। কিন্তু এর গোপন তাৎপর্যটুকু বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয়। ইয়াহিয়া চেয়েছিল ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধকে ধামাচাপা দিতে। কিন্তু ভারত-রাশিয়া শান্তি ও সহযোগিতার চুক্তি জল্লাদের সে খায়েশ চিরতরে গুড়িয়ে দিয়েছে। এখন একটিমাত্র তুরুপের তাস আছে ইয়াহিয়ার হাতে। আর সে হচ্ছে শেখ মুজিবের জীবন। তাই সে চাইছে বিচার প্রহসনে বঙ্গবন্ধুর চরম দণ্ডের ব্যবস্থা করে তার জীবনরক্ষার ক্ষমতাটুকু নিজের হাতে নিয়ে তাই দিয়ে রাজনীতি করতে। আর ইয়াহিয়ার এই গোপন উদ্দেশ্যটি সম্পর্কে টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে : “এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই যে শেখ মুজিবকে দণ্ড দেওয়া হবে। তবু মনে হয় ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে না। কারণ, সে জানে বাংলাদেশের যুদ্ধে এক পাকিস্তানের আসা চিরতরে সমাধিস্থ হয়েছে। শেখ মুজিবকে বাচিয়ে রাখলে অন্তত একটা শেষ সুযোগ পাওয়া যাবে। সে হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী রক্তাক্ত যুদ্ধের বদলে শান্তিপূর্ণভাবে বাংলাদেশ ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভাগাভাগিটা সম্পন্ন করা।” অতঃপর মন্তব্য নিম্প্রয়োজন। ২২ শে আগষ্ট, ১৯৭১ লণ্ডনের ডেলী টেলিগ্রাফ পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানী জঙ্গীশাহীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার পন্থা স্থির করার উদ্দেশ্যে ইসলামাবাদ ও তেহরানে গোপনে গোপনে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চলেছে। এই তৎপরতার নায়ক ইরান। আর এই পেছনে নাকি সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার খবরটিতে আরও বলা হয়েছে যে, পশ্চিম পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের সেক্রেটারী ইতিমধ্যেই তেহরান পৌছেছেন। সেখানে ইরানের উদ্যোগে তার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের গোপন সাক্ষাৎকারের আয়োজন হবে। সুদূর ইরানে বাংলাদেশ প্রশ্ন নিয়ে পর্দার অন্তরালে কি ঘটেছে স্পষ্ট জানবার উপায় নেই। আর সে নেপথ্য নাটকে তেহরান-চন-রাশিয়ার ভূমিকাটাও সহজবোধ্য নয়। ডেলী টেলিগ্রাফের এই খবরটি ছাড়া এ ব্যাপারে আর কোন সূত্র থেকে কোন তথ্যও আমাদের হাতে আসেনি। তাই এক কথায় খবরটি উড়েয়ে দেয়া বা একে সত্য বলে মেনে নেয়া কোনটাই সহজ নয়। তবু কথা আছে। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচআক্রমণের মুখে জল্লাদ ইয়াহিয়ার ভাড়াটিয়া বাহিনী আজ দিশেহারা। প্রতিদিন ওরা মরছে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। আর সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করতে মাত্র কদিন আগে নতুন করে এক ডিভিশন সৈন্য আমদানী করা হয়েছে বাংলাদেশে। আমেরিকা থেকে প্রচুর অস্ত্র আসছে, চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম আসছে, মার্কিন বিশেষজ্ঞ এসেছে। এমনকি জর্দান থেকে লোক ভাড়া করে আনা হয়েছে বাংলাদেশের বীর যোদ্ধাদের মোকাবিলা করার জন্য। কিন্তু তবু অবস্থার উন্নতি হয়নি-পায়ের তলা থেকে দ্রুত মাটি সরে যাচ্ছে ইয়াহিয়ার প্রতিদিন নয়া নয়া এলাকা মুক্ত হচ্ছে। অবস্থা বেগতিক দেখে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ইয়াহিয়া খান প্রাণপণ চেষ্টা করেছে পাক-ভারত যুদ্ধ বাধাতে। ভারত-সোভিয়েত শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতার মদমত্ত সেই নরঘাতক চেষ্টা করেছে জাতিসংঘকে টেনে এনে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকে বাংলাদেশ প্রশ্নকে পাক-ভারত বিরোধ বলে চিহ্নিত করতে। কিন্তু সে চেষ্টাও তার নিদারুন ব্যর্থতা বরণ করেছে। আরেকটা চাল খেলেছে খুনী ইয়াহিয়া। সে