পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

116 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড বলে মেনে নেবে। ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বজনমত বিভ্রান্ত করার জল্লাদী খায়েশ নির্ঘাত মাঠে মারা যাবে। আর সেই ভয়েই জঙ্গীশাহী প্রাণপণ চেষ্টা করছে যাতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বিশ্বসংস্থার আঙ্গিনায় ঢুকতে না পারেন—তাদের কাছে বক্তব্য পেশ করতে না পারেন।... ৮ নভেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় জঙ্গীশাহীর উপনির্বাচনের প্রহসন সম্পকে আরও জবর খবর এসেছে। শত্ৰকবলিত ঢাকা বেতার মারফত জানা গেছে যে, অধিকৃত এলাকার যে ৭৮টি জাতীয় পরিষদের আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যদের খারিজ করে উপনির্বাচন হচ্ছে তার ৫৫টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাকিস্তান দরদী ইসলামী-দরদীরা নির্বাচিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রাদেশিক পরিষদের ১৯৩টি আসনের ৮৫টিতে জনাবরা নির্বাচিত বলে ঘোষিত হয়েছে-ভোটাভুটির দরকার হয়নি। এদিকে রেডিও পকিস্তান জানিয়েছে লাহোরে ইয়াহিয়া খাঁ’র সঙ্গে তার বৃদ্ধ ঘেটু নুরুল আমিন সুদীর্ঘ আলোচনা-বৈঠক চালিয়েছে। বিদেশী বার্তা প্রতিষ্ঠা জানিয়েছে, ইয়াহিয়া খান নূরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী এবং ভুট্টোকে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পরিকল্পনা করেছে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায় নিয়েই নাকি জল্লাদ আর দালালের সলাপরামর্শ চলেছে। অপরদিকে ভুট্টোর ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী-গিরির চাকরিটা পাকা হবার সম্ভাবনাই বেশী বলে মনে করা হচ্ছে তার চীন সফরের দরুন। কিছুদিন আগেও ভুট্টো ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে অনেক গরম গরম কথা বলেছে। আর শেষ পর্যন্ত সেই ইয়াহিয়ারই ট্যাণ্ডেল হিসাবে সে পিকিং সফর করছে সমরাস্ত্রের ভিক্ষাপাত্র হাতে। বুঝতে কষ্ট হবার কথা নয় যে ক্ষমতার কাঁচকলার গন্ধ পেয়েই ভুট্টো এতটা তকলিফ স্বীকার এবং নীচে নামতে রাজী হয়েছে।... এবার আসা যাক উপনির্বাচনের তেলেসমাতি খেলার কথায়। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলি ,'৭০-এর ডিসেম্বরের নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারাই বাংলাদেশের জনগণের বিশ্বস্ততম প্রতিনিধি। তাদেরই নিয়ে গঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। তাই বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় পর্যন্ত এই তথাকথিত জল্লাদী উপনির্বাচন শুধু অপর একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপই নয়-ইয়াহিয়ার এক হাস্যকর পাগলামিও বটে। আর এই উপনির্বাচন সম্পর্কে ইয়াহিয়ার খাস তালুক পশ্চিম পাকিস্তানের পত্রপত্রিকার মতামতই কি তার প্রতি খুব অনুকূল? মোটেই নয়। সেকথাই এখন বলছি। করাচীর ডন পত্রিকা বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকার উপনির্বাচনে ভুট্টোর পিপলস পার্টির ৬ জন সদস্যের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াকে “রহস্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছে। পত্রিকা বলেছে, এটা সত্যিই রহস্যাবৃত-কেন এই ৬টি আসনের সবকটিতে পিপলস পার্টির বিরোধী নুরুল আমিন নেতৃত্বাধীন ৬ নুরুল আমিনও দিতে পারেনি-সে জানে না। লাহোরের উর্দু দৈনিক কোহিস্তান জানিয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই ৬টি আসন দখল করার জন্য পিপলস পার্টি বিরোধী প্রার্থীদের ২২ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়েছে। আরেকটি লাহোরী উর্দু দৈনিক আজাদ এ ব্যাপারে তদন্ত দাবী করেছে। পত্রিকাটির এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছে। এই উপনির্বাচনের ফলাফল জনগণকে এবং বিশ্ববাসীকে নির্বাচনের বৈধতা, নিরপেক্ষতা ও সত্যতা সম্পর্কে সংশোধন করতে পারবে না। পত্রিকাটি বলেছে, এই ৫৫টি আসনে তারাই নির্বাচিত বলে ঘোষিত হয়েছে, ডিসেম্বরই নির্বাচনে যাদের জামানত পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তারপর আমাদের আর কি বলার আছে?