পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

124 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড একাশি বছরের বৃদ্ধ সাদেক আলী লাঠীতে ভর দিয়ে যখন এসে পৌছালেন তখন সকাল আটটা। গভীর মমত্ববোধে তাকিয়ে রইলেন জওয়ানদের মুখের দিকে। শীর্ণ হাতে ধরে থাকা একটা কলাপতার ঠোঙা। ওটার মোড়ক খুলে বেরুল এক টুকরো রুটি। বৃদ্ধ একজন জওয়ানের দিকে এগিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন ঠোঙাটি। দেখতে পেয়ে জনৈক কর্মী ছুটে এলেন। বললেন কিছু দিতে হলে আমাকে দিন। ভদ্রলোকে রুটি টুকরোটি এগিয়ে দিলেন কর্মটির দিকে। বললেন, আমি গরীব মানুষ। এক টুকরো রুটি দেয়া ছাড়া আমার আর সাধ্য নেই বাবা। বয়স কম হলে যুদ্ধে যেতাম। কিন্তু আল্লাহ সে সৌভাগ্যও কপালে রাখেননি। আপনি কোথেকে এসেছেন? কর্মটি সহনুভূতির স্বরে জিজ্ঞেস করলেন। গ্রামের নাম বললেন বৃদ্ধ। আত্মপরিচয়ও দিলেন, “আমি গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতাও করেছি। এখন আর কিছু করে খাবার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু আপনি দেড় মাইল পথ হেঁটে রুটি বয়ে আনলেন, কষ্ট তো আর বাধা দিয়ে বৃদ্ধ বললেন, “আমার এতগুলো ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দেবে, আর আমার হবে কষ্ট? একটু যেন উষ্ণতা তাঁর কণ্ঠে। ভদ্রলোক বিশেষ অপেক্ষা না করে চলে গেলেন। এক টুকরো রুটি নিয়ে যুদ্ধকর্মটিকে যথেষ্ট অসুবিধেয় পড়তে হল। সকালের টিফিন-সবারই খাওয়া হয়ে গেছে। রুটিটা তাহলে কি করা যায়? এমনিতর রুটি তখন পর্যন্ত আর আসেনি, সুতরাং ওটাকে আলাদা রাখতে হবে এবং এক টুকরো রুটির জন্যে আলাদা ব্যবস্থার প্রয়োজন। কর্মটি মনে মনে বিড়ম্বনা বোধ করলেন। বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক সুবেদার সাহেবে তাঁর প্লাটুন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন অপারেশনের জন্যে। কর্মটি তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, এটা খেয়ে নিন তো? আমার নাস্তা সারা হয়েছে। সুবেদার বললেন, এখন এটা দিয়ে কি করব? কর্মটি স্নান মুখে বললেন, আমার রাখার অসুবিধা হচ্ছে। একজন অনেক কষ্ট করে রুটিটা নিয়ে এসেছেন। সুতরাং কোনদিকে ফেলে রাখতেও মন চাইছে না। দিন তাহলে আমেকে, সুবেদার সাহেব হাত বাড়িয়ে রুটির টুকরোটি নিলেন। তারপর ওটা কাগজে মুড়িয়ে প্যান্টের পেছন-পকেটে ভরে রেখে দিলেন। ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু তা হল না। দুদিন পর্যন্ত কোন খোঁজ পাওয়া গেল না বিস্তর পাক সৈন্যকে খতম করেছে ওঁদের দলটি। গড়পড়তায় এক-একজন মুক্তিযোদ্ধা তিনজন পাকিস্তানীর প্রাণ নিয়েছে। কিন্তু সুবেদার সাহেব বেঁচে আছেন কিনা কে জানে! হ্যাঁ, বেঁচেছিলেন সুবেদার সাহেব। তিনদিন পরে যখন ফিরলেন তখন তাঁকে দেখে মনে হল, কয়লার খনি থেকে এইমাত্র বেরিয়ে এসেছেন যেন, দুচোখ ভরে কালি পড়েছে। শ্রন্তি আর ক্লান্তির প্রলেপ পড়েছে মুখে। কিন্তু সুবেদার সাহেব কাকে যেন খুঁজছেন। পেয়েও গেলেন এক সময়। সেই যুদ্ধকর্মটিকে সামনে দেখে হাত চেপে ধরলেন তার বললেন, আপনি আমার খুব উপকার করেছেন। আ-আমি! অপ্রস্তুত হলেন কর্মটি