পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড বাবার কথা বলবেন না, সে পরে বলব, আমি আবার একটু ভদ্র ছেলে ছিলাম কিনা, মুক্তিফৌজ যোগদান করব ভেবে বিদায় চাইতে গিয়েছিলাম। অফিসার ভদ্রলোক অন্য প্রসঙ্গ তুল্লেন, বল্লেন-ঢাকার কি খবর বলো। সবাই স্বাধীন বাংলা বেতার শুনছে, ঐ যে “পরমপত্র’ বলে অনুষ্ঠানটা-দারুণ পপুলার। আচ্ছা বলুন না ভদ্রলোক কি এই ক্যাম্পে থাকনে? আমি দেখব। পাকিস্তানী বেতার লোকে শোনে না তাহলে? শোনে মাঝে-মধ্যে, তবে স্বাধীন বাংলা না থাকলে ভারতীয় বেতারই শোনে বেশী। বিশেষ করে রাত সাড়ে দশটার সংবাদ পরিক্রমা। ব্যাস! এবার বলো ঢাকার মুক্তিসেনার গেরিলারা কেমন কাজ করছে? করছে বেশ ভাল, কয়েকটি তো ঘুঘু লোককে সাবাড় করে দিয়েছে। তবে টপ লীগার ফিগারগুলোর মাথায় মিলিটারী ছাতা ধরা কিনা, ঝড়-বৃষ্টি এখনও এদের গায়ে লাগেনি, দুচারটে বাজ ফেলতে পারলে কাজ হবে। এরপর ছেলেটাকে তার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ জিজ্ঞেস করা হলো। ওর নাম মোরশেদ। ঢাকার এক অভিজাত এলাকায় ওদের বাড়ি। ওদের এলকায় একটি লিষ্ট তৈরি করে মিলিটারিরা লোকজন ধরছে। বিশেষ করে কম বয়সী ছেলেদের । ওর জন্য অবশ্য বিশেষ ভয় ছিল না। ও বরাবরই একজন গুড বয়। বাংলাদেশের আন্দোলন সম্পর্কে ওর সচেতনতা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২৫শে মার্চের পরের ঘটনা ওকে দারুণভাবে প্রভাবন্বিত করে। তারপরই মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখাবে বলে ঠিক করেছে। তদন্ত ও অন্যান্য কাজ শেষ হলে মোরশেদকে মুক্তিযুদ্ধে ভর্তি করে ট্রেনিং সেন্টারে পাঠান হল। এতদিনে ওর সকল স্বপ্ন যেন সার্থক হয়েছে। সেই সফলতার ছাপ লাগল ওর চোখে -মুখে। ওদের ট্রেনিং ক্যাম্পের এক অফিসারের উপর ভার পড়েছিল একটি লিষ্ট তৈরি করবার, তাতে পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনীর সাহায্যকারী দালালদের নাম সংকলিত করে ওদের খতম করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দান ছিল অফিসারটির কাজ। দুজন বন্ধুকে নিয়ে মোরশেদ ঢাকা থেকে নবাগত বলে উনি ওর সাথে আলাপ করছিলেন। আপনি কি শত্রদের লিষ্ট করেন? মোরশেদ এক সময় তাঁকে প্রশ্ন করল। কেন? অফিসারটি এহেন প্রশ্নের জন্য বোধ করি প্রস্তুত ছিলেন না। আমি আপনাকে একটা নাম দেব। মোরশেদ বলল। সবার কাছে সব সময়ে অবশ্য নাম নেওয়া হয় না। নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি সম্পর্কে যদি শত্রতার উপযুক্ত প্রমাণাদি পাওয়া যায়, তবেই তার নাম তালিকায় রাখা হয়। আমি কিন্তু সত্যি সত্যি একজন শত্রর নাম আপনাকে বলতে পারি, মোরশেদ জানালো। কিন্তু, সে তো সত্যিকার শত্রু না-ও হতে পারে। আসলে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি না বল্লে ঠিক বোঝা যায় না কে কোন ধরনের শক্র । অনেকে ব্যক্তিগত শত্রতার জন্যও আমাদের কাছে একজনের নাম দিয়ে বসতে পারে। এই বিষয়ে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হয়।