পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ব্যক্তিগত শক্রহলেই দেশের শক্রহবে এমন কি কথা আছে? দেশের শক্রমানে দেশের শত্রই। কিন্তু সেটা তুমি কিভাবে বিচার করবে। এমন তো হতে পারে যে, তুমি যাকে শত্রুভাবছ, চরম মূল্য দেবার মতো শক্রসে নয়। আমি তাকে ভাল করেই চিনি। তিনি যে দেশের জন্য ক্ষতিকর কাজ করেছেন, সে সম্পর্কেও কোনরকম সন্দেহ নেই। মোরশেদ বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বল্লো কথাগুলো। সব অভিযোগ খুলে বল্লো। কি নাম তার বলো। অফিসারটি কাগজ-কলম নিলেন। বল্লেন, যাচাই করে অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থাই নিতে হবে। এবারে অকস্মাৎ স্নান হয়ে উঠল মোরশেদের মুখ। চেখের সমস্ত উজ্জ্বল্য যেন নিভে গেলো, শীতল কণ্ঠস্বরে বল্লো-আমি একটা কথা বলতে চাই এ সম্পর্কে। কি কথা? ধরুন তাকে না মেরে বন্দী করে নিয়ে আসা যায় না? সেসব আমরা দেখব। তোমার ভাবনায় কারণ নেই, তাকে যদি বন্দী করে রাখা যায় তো সবচেয়ে ভাল। বল্লাম তো! সে আমরা দেখব, অফিসারটি ওর চোখ-মুখের ওপর দৃষ্টি ফেলেই হঠাৎ ধমকে গেলেন, বল্লেন, লোকটির প্রতি তোমার দুর্বলতা আছে মনে হয়; কিন্তু ওর কাজের বর্ণনা শুনে কিন্তু তার প্রতি কোন দুর্বলতা থাকার কথা নয়। মোরশেদ চুপ করে রইল, কিছু বল্লো না। কথা বলছে না কেন? অফিসার ভদ্রলোক সহানুভূতির সাথে জিজ্ঞেস করলেন। উনি আমার আববা, মোরশেদ বল্লো। ওর দুচোখের পাতা ভিজে উঠছে। না। মোরশেদের আববার নামটি শেষ পর্যন্ত শত্রর তালিকায় উঠাতে পারেন নি অফিসার। ঐ তালিকায় নাম থাকার একটিমাত্র অর্থ, তা হচ্ছে মৃত্যু। গেরিলা যুদ্ধের প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে মোরশেদ এখন দিগ্বিজয়ের মতো একটির পর একটি দেশের শত্রকে খতম করছে। ওর মতো একটি ছেলের শুধুমাত্র জনক হয়ে মোরশেদের বাবা তা জীবনের মূল্য পরিশোধ করেছেন। জনাব আফতাব আলী সাহব-ঐ হীরের টুকরো সন্তানের ত্যাগ ও দেশপ্রেমের কথা স্মরণ করে নিজেকে আপনি সংশোধন করবেন না কি?