পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

133 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ২১ আগষ্ট, ১৯৭১ শেখ মুজিব আজ কোন ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়- শেখ মুজিব আজ বাংলার ইতিহাস। বাংলার ২৩ বছরের রাজনীতি তথা সামাজিক উত্থান-পতনের সঙ্গে তিনি এক হয়ে মিশে গিয়েছেন। শোষণ ও পীড়নের রাজনীতিতে শেখ মুজিব এক আশ্চর্য প্রতিবাদ। প্রতিবাদ তিনি করেছেন সমস্ত জীবন ধরে, সমস্ত সত্তা দিয়ে। তিনি তাঁর পর্বতপ্রমাণ আটল সাহস ও মনোবল নিয়ে সবকিছু বাধাবিঘ্নকে অতিক্রম করে এককভাবে বাংলার আজ সেই শেখ মুজিব, যাঁকে বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালী বঙ্গবন্ধু নামে আখ্যায়িত করেছিল এবং যিনি শুধু মুজিব ভাই বলে সবারই কাছে পরিচিত হতে চেয়েছিলেন তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিযে গিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে এবং বিচারের নামে প্রহসন চলছে। শেখ মুজবুর রহমান বাংলার সন্তান। বাংলাদেশে জন্মেছেন, বাংলাদেশে লালিত-পালিত, বাংলাদেশকে ভালবেসেছেন এবং সাড়ে সাত কোটি বাঙালী আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার অকুণ্ঠ ভালবাসা পেয়েছেন। শুধু তাই নয় বাঙালীর স্বার্থে বাঙালীর মুক্তি কামনায় নিজের জীবনের সুখ-শান্তি চিরদিনের মত বিসর্জন দিয়েছিলেন। সেই শেখ মুজিবকে বাংলাদেশে না রেখে সুদূর পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শোষক গোষ্ঠী সমস্ত রকমের আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত হয়েও নিরীহ বাঙালীর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তাঁকে ১২০০ মাইল দূরে বন্দী করে রেখেছে। শুধু তাতেই তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করেনি। বাঙালীর কণ্ঠকে ও দাবীকে চিরকালের জন্য স্তব্ধ করার জন্য তাঁকে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।... এবারের এই বন্দীদশা তিনি অনায়াসে এড়াতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন গণতন্ত্রে, বিশ্বাস করতেন অহিংস আন্দোলনে। তিনি কোনদিন মনে-প্ৰাণে গ্রহণ করতে পারেননি যে, বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস। তিনি কোনদিন চাননি নিরস্ত্র, নীরহ জনসাধারণের রক্তে বাংলাদেশ রাঙা হোক। আগরতলা কেস থেকে মুক্তি পেয়েই রমনার রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন, “আমি জনগণের রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করব না, দেশের স্বাধীনতার জন্য দরকার হলে সবার আগে আমি রক্ত দেব”। তিনি নিজের ঘোষণার সম্মান দিয়েছেন। আজ তিনি ধৃত। আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধে তিনি সবার আগে তাদের হাতে ধরা পড়েছেন। আর আজ জল্লাদ ইয়াহিয়া বিচারের আসনে বসেছেন। কিন্তু কার বিচার কে করে? তাঁকে বিচারের অধিকার খুনী ইয়াহিয়ার নাই। শেখ মুজিব সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর আশা-ভরসার স্থল, তাদের একচ্ছত্র নেতা। স্বৈরাচারী ইয়াহিয়া তাঁকে ভাবী প্রধানমন্ত্রী বলে অভিনন্দিত করতেও কসুর করেনি। আজ শেখ মুজবুর রহমান যদি অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতেন তাহলে ইয়াহিয়াকে তাঁরই হুকুমের তাঁবেদার হতে হতো। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে শেখ মুজিবের বিচার তিনি করতে বসেছেন। যদি বিচার করতেই হয় তাহলে এত গোপনীয়তা কেন? কেন আজ স্থানের নাম পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে? কেন বিচারকদের নাম জনগণকে জানান হচ্ছে না? কেন বাইরের কৌসুলী আসবার অনুমতি দেয়া হয়নি? শেখ মুজিব যদি দেশদ্রোহী বা দেশের শক্র হন তাহলে সাধারণ কোর্টে এবং সবার সামনে বিচার করার মত সৎসাহস থাকা উচিত ছিল।... আজ পৃথিবীর শান্তিকামী, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের কাছে আমাদের দাবী ও আবেদন তাঁর যেন শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন বন্ধ করতে জল্লাদ ইয়াহিয়াকে বাধ্য করেন। শেখ মুজিবুর রহমান কোন একটি বিশেষ দেশের মানুষ নন। তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক, তিনি নিপীড়ত জনগণের ত্রাণের প্রতীক। তাঁর জীবন রক্ষা