করার দাযিত্ব শুধু বাংলাদেশের লোকের নয়, তাঁকে রক্ষা করার দায়িত্ব শান্তিকামী প্রতিটি মানুষের। শেখ মুজিবকে হত্যা মানেই গণতন্ত্রকে হত্যা করা- সত্য ও ন্যায়কে আবর্জনার আঁস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলে দেয়া।
বাংলাদেশের মা-বোনের তরফ থেকে আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই, তাঁর মত মহান নেতার কোন ক্ষতি আমরা সহ্য করবো না। এবং তাদের এই বলেই সাবধান করে দিতে চাই, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালী পশ্চিম পাকিস্তানের কোন লোককেই ক্ষমা করবে না।...
১৫ নভেম্বর, ১৯৭১
বাংলাদেশের মানুষের উপর যখন ইয়াহিয়া খানের সৈন্যবাহিনী হিংস্র হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়লো, যখন বাংলার শ্যমল প্রান্তরে রক্তের প্লাবন বয়ে চললো, যখন বাংলার আকাশ নির্যাতিত মানুষ ও ধর্ষিতা মাবোনদের আর্তনাদে বেদনাকরুণ, তখন পৃথিবীর মানুষের চোখে এক নিদারুণ বিস্ময় ঘনীভূত হয়ে উঠেছিলো। পরম বিস্ময়ে মানুষ দেখেছিলো বিশ্ববিবেক যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ী বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির সরকার, যারা গণতন্ত্র এবং মানবতার নামে চীৎকারের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ, তাদের কণ্ঠ রুদ্ধ। শুধু তাই নয়, পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের এই রক্তপ্লাবী ঘটনাকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার বলে একটা ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টারও অন্ত ছিল না। এদের মনোভাব দেখে এই সময়ে মনে হয়েছিলো ব্যবসার মুনাফার বেদীমূলে তারা মানবতাকেও বলি দিতে কুণ্ঠিত নন। বাংলাদেশের ঘটনা যে পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার নয় সেই সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিলো “লাখো লাখো আদম সন্তানের লাশের তলায় পাকিস্তানের কবর রচিত হয়েছে। পাকিস্তান আজ মৃত। রক্তস্নানের মধ্য দিয়ে একটা নতুন জাতির জন্ম হয়েছে।” কিন্তু তার এই পরিষ্কার ঘোষণাটিও যেন তখন পৃথিবীর বৃহৎ রাষ্ট্রবর্গের মনে কোন সাড়া জাগাতে পারেনি। কিন্তু দেখা গেল মানবতাকে রক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর মুক্ত মানুষের মন সোচ্চার হয়ে উঠলো বাংলার মানুষের সপক্ষে। ধিক্কার দিল তারা ইয়াহিয়ার জঙ্গী শাসক ও পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক চক্রকে। ব্যবসার মুনাফার গোলকধাঁধায় বাধা সরকার ছাড়া প্রতিটি দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ বাংলার মানুষের পাশে এসে দাঁড়ালো।
ইংল্যাণ্ডের লিবারেল দলের M.P মিঃ রাসেল জনস্টোন ৩১ মার্চে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বল্লেনঃ
“আমি বিশ্বাস করি না ইহাকে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলিয়া বৃটেন নীরব দর্শকের ভূমিকায় অভিনয় করিতে পারে। আমাদের চোখের সম্মুখে যে ঘটনা সংঘটিত হইতেছে তাহা চূড়ান্ত বর্বরতার নামান্তর মাত্র। শান্তি ফিরাইয়া আনা এবং মীমাংসার জন্য কমনওয়েলথের প্রধান সদস্য হিসাবে বৃটেনকে তাহার সমস্ত কিছুই করিতে হইবে।”
“Conflict in East Pakistan: Background & Prospect” শিরোনামে হার্বার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন অধ্যাপক- মি: এডওয়ার্ড মেসন, রবার্ট ডর্ফম্যান এবং স্টীফেন এ, মার্গলিন ১লা এপ্রিল তারিখে লিখলেনঃ
“স্বাধীন বাংলাদেশ অবশ্যম্ভাবী। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম, বাংলাদেশ হবে একটি সত্যিকারের স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু প্রশ্ন হল এই স্বাধীনতার জন্য তাকে কত রক্ত ঢালতে হবে।”
History of Economics & Political Domination of East Pakistan পত্রিকায় Herbert বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপন সোসাইটি লিখলেন, “বাংগালীরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং তাঁরা মুক্তিযুদ্ধ লড়ছে।