পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

14| বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড থেকে নেমেছে মেরামত করার জন্য। এ সময়ের জন্যই ওৎ পেতে বসে ছিল মুক্তিসেনারা-সংখ্যায় মাত্র ১০ জন। সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠলো তাদের রাইফেল। ভূলুষ্ঠিত হল আক্রমণকারী পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনীর ১৫/১৬ জন সৈন্য। শত্রসেনারা মেশিনগান, মর্টার আর রকেট ব্যবহার করেও মাত্র ১০ জন মুক্তিকামী বাঙালীর সামনে চলে যায়। নিরপরাধ জনগণের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়, হত্যা করে নিরস্ত্র লোকজনকে আশ্চর্য পৌরুষ পাকিস্তানী সৈন্যদের। মুক্তিবাহিনীর হাতে মার খেয়ে নিরস্ত্র মানুষ মারার অদ্ভুত মনোবল! আরও আশ্চর্য ইসলামপ্রীতি এহিয়া খানের ইসলাম কি কোথায়ও নিরস্ত্র, নিরপরাধ লোককে হত্যা করার অনুমতি দিয়েছে? অনুমতি দিয়েছে কি অসংখ্য নিরপরাধ লোকের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার, খাদ্যশস্য নষ্ট করার? মেয়েদের উপর পাশবিক অত্যাচার করার? জানি, এহিয়া খান এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে-পারবে না। কিন্তু যত অত্যাচারই করুক না কেন বাংলার জনগণ এবার এদের উৎখাত করবেই। একজন বাঙালী জীবিত থাকলেও সে পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করবে। বাংলাকে মুক্ত করবে। আমরা পশুর-মত বাঁচতে পারি না। আমাদের মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছে তাদের আমরা ক্ষমা করতে পারি না। তাইতো সেদিন বাংলার সোনা ফলানো মাঠের মধ্য দিয়ে আসবার সময় কয়েকজন কৃষক আমার কাছে এসেছিল। ওরা বলছিলো, “তিন গাঁয়ের লোক সভা করে ঠিক করেছে-যদি গায়ে মিলিটারী আসে তবে লাঠি, দা আর বর্শা নিয়েই তাদের খতম করব। গায়ের একটা উপর মিলিটারী এত অত্যাচার করবে তা হতে দেওয়া হবে না।” ওরা জানে ওদের লাঠি আর বর্শা মিলিটারীর মারণাস্ত্রের তুলনায় কত নগণ্য। কিন্তু কি অদ্ভুত প্রত্যয়! এহিয়া খান, তুমি এদের পরাভূত করতে পারবে কি? (এই কথিকাটির লেখকের নাম জানা যায়নি) ২৭ জুলাই, ১৯৭১ অসম সাহসীর অধিকারী মুক্তিবাহিনীর হাতে নরপশুরা মার খেয়ে চিরতরে বিদায় নিয়েছে, আর অনেকে হাসপাতালে পা-হাত হারিয়ে কাতরাচ্ছে। তাদের বন্ধুরা সেসব দেখেশুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা হতে যেসব বংবাদ পাওয়া গেছে তাতে মনে হয় ‘ছেড়ে দে মা পালিয়ে বাঁচি এই পুরাতন কথাটি ওরা জেনে ফেলেছে। কারণ, পশ্চিম পাঞ্জাবী কুকুরদের সঙ্গে বালুচ ও পাঠান সৈন্যদের তীব্র মতদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পশ্চিম পাঞ্জাবী অধিনায়ক অনেক জায়গায় বালুচ ও পাঠান সৈন্যাদের নিরীহ নিষ্পাপ গ্রামবাসীদের উপর গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিলে এই মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। যার ফলে সৈন্যদের মধ্য হতে একটা বিরাটসংখ্যক অংশ বাঙালীদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে রাজী নয়, এ দৃষ্টান্ত কয়েকটা ঘটনায় সোচ্চার হয়ে উঠেছে। কিছুসংখ্যক পাঠান সৈন্য মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে মুক্তিফৌজে যোগদানেরও ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। অনেকে নিজের পায়ে নিজেরা গুলি করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তারা জানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে