পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|45 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড সে সম্পর্কে বিশ্বের কোন দেশের কোন মানুষের মনে এতটুকু সন্দেহ নেই। শেখ মুজিবের বিচার প্রহসন সম্পর্কে ইউরোপের প্রভাবশালী দৈনিক ‘ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর’ পত্রিকা গত ১২ই আগষ্ট তারিখে এক সম্পাদকীয় প্রবন্ধে বলেছেনঃ “এই বিচারে বিদেশী সাংবাদিকদের পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে দেয়া হচ্ছে না। বিদেশের সংবদাপত্রগুলোর প্রতি ইসলাবাদের এই অবিশ্বাস, পাকিস্তানের কল্যাণ সাধন করবে না।” ‘ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর’ পত্রিকা ঠিকই বলেছেন। তবে তিনি বলছেন বিদেশী সাংবাদিকদের প্রতি ইসলামাবাদের জঙ্গীচক্রের অবিশ্বাস, আসলে সেটা ভয়। ইয়াহিয়া জানে, গত ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় বিদেশী সাংবাদিকেরা ছিলেন বলেই, তার পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের কথা বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে। আজো শেখ মুজিবের তথাকথিত প্রহসন যদি বিদেশী সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকেন, তাহলে আসল কথা ফাঁস হয়ে যাবে। ধরা পড়বে আসল অপরাধী ইয়াহিয়া এবং তার বেঈমান খুনী চক্র। তাই বিচারের নামে খুনী ইয়াহিয়ার এই কঠোর গোপনীয়তা। প্রতি যুগে বিচারের নামে ইয়াহিয়ার মত খুনীচক্রের যে হত্যালীলা, তারই প্রতি ধিক্কার জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন ‘আমি যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে পশ্চিম পাকিস্তানে ইয়াহিয়ার খুনীচক্রের ষড়যন্ত্রে আজ এই বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদছে। তবে কবিগুরু, তোমোকে আজ সাড়ে সাত কোটি বাঙালী দৃঢ় আস্থার সঙ্গে এই আশ্বাস দিতে পারে, বাংলাদেশে প্রতিকারহীন শক্তির যুগ শেষ হয়ে গেছে। শয়তান ইয়াহিয়া চক্র আজ বাংলাদেশে প্রতিকারহীন শক্তি নয়। এই জানোয়ারদের, এই বর্বর পশুশক্তির পৈশাচিক অত্যাচারের প্রতিকার করার জন্য বাংলাদেশের তরুণরা আজ অস্ত্ৰধারণ করেছে। বাঙালী মুক্তিবাহিনী আজ অজেয়, অপরাজেয়, অপ্রতিরোধ্য। এই অপরাজেয় মুক্তিবাহিনীর ভয়ে কাপুরুষ ইয়াহিয়া ঢাকা আগমনের সাহস পাচ্ছে না। টিক্কা এবং সৈন্যরা আশ্রয় নিয়েছে ছাউনিতে। এখন প্রশ্ন, এত শীঘ্ৰ শেখ মুজিবকে বিচারের নামে হত্যা করার জন্য পাগলা কুকুরের মত কেন হন্যে হয়ে উঠেছে ইয়াহিয়া? এই প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত সোজা। মূখ ইয়াহিয়া ভেবেছে- এক, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হলে বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর উৎসাহ নষ্ট হবে এবং মুক্তিযুদ্ধ ব্যর্থ হবে; দুই বাংলাদেশ নেতাহীন হবে এবং তার প্রতিরোধ শক্তি ধ্বংস হবে; তিন. শেখ মুজিব বেঁচে না থাকলে বাংলাদেশের সারা এলকা স্বাধীন হলেও তাকে সংগঠিত ও স্থিতিশীল করার মত কোন নেতা ও সংগঠন থাকবে না। আগেই বলেছি, অতীতের ইতিহাস থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করেনি এই মূৰ্খ ইয়াহিয়া। নইলে সে জানতো, আইয়ুবের আমলে এই পরীক্ষা একবার নয়, বহুবার হয়ে গেছে। ১৯৬৬ সালে যখন বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফার আন্দোলন শুরু করেন, তখন আইয়ুব বঙ্গবন্ধুকে দীর্ঘকালের জন্য কারাগারে রেখে ভেবেছিল আন্দোলন ব্যর্থ হবে। শেখ মুজিবকে ছাড়া তার হাতে গড়া আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনকে টিকিয়ে রখতে পারবে না। আইয়ুবের এই দুরাশা ব্যর্থ হয়। ১৯৬৭ সালে কুচক্রী নওয়াবজাদা নসুরপ্লাকে হাত করে পশ্চিম পাঞ্জাবের চৌধুরী মোহম্মদ আলী চক্র ভেবেছিল, শেখ মুজিব জেলে রয়েছেন এই সুযোগে আওয়ামী লীগকে ভেঙে তাদের পকেট প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যাবে। কিছু লোককে হাত করে এজন্য তারা চেষ্টাও চালিয়েছিলেন, কিন্তু নসরুল্লার এই চক্রান্তও সফল হয়নি। ১৯৬৮ সালে যখন তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করা হয়, তখনও আইয়ুব চক্র ভেবেছিল শেখ মুজিবকে জেলে রেখে এই মামলার বিচার চালানো হলে দেশে নেতৃত্বের অভাবে কোন আন্দোলন হবে না। আইয়ুবকে এই ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে অত্যন্ত কঠোরভাবে। ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের দাবীতে যে গণবিপ্লব হয়, তখনো শেখ