পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

148 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড জাতীয় পরিষদে মাত্র ৮৮ জন এবং প্রাদেশিক পরিষদে ৯৩ জন আওয়ামী লীগ নেতার সদস্যপদ বাতিল হয়নি বলে পিণ্ডি সরকার ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত বাংলাদেশ নাগরিকদের বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, উক্ত মোট ১৮১ জন আওয়ামী লীগ পরিষদ সদস্য ইয়াহিয়া ও তার উন্মাদ জেনারেলদের পাশে রয়েছেন। এমন কি বাংলাদেশে গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিকাণ্ড, ও নারী নির্যাতন তারা সমর্থন করেন। পরিষদ সদস্যদের একটা বিরাট অংশ স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাস করেন না। অপরদিকে এমন একটা ভ্রান্ত ধারণা দিতে চেষ্টা করা হয়েছে যে, উক্ত ১৮১ জন সদস্য ইয়াহিয়ার কোটের পকেটে রয়েছেন। বিশ্ববাসীর কাছে তিনি এই বিভ্রান্তিকর চিত্র সাময়িককালের জন্যে তুলে ধরেছেন। কারণ মিথ্যাশ্রয়ী এই জেনারেল জানেন যে, ১৮১ জন সদস্য তার মুঠোর মধ্যে নেই। এদের প্রায় সব ক’জনই বিশ্বাসঘাতকের ভূমিকা পালন করতে যাননি। তিনি সদস্যপদ বাতিল না করে শুধুমাত্র প্রলোভন দেখিয়েছেন। এতো ব্যাপকসংখ্যক আওয়ামী লীগ সদস্যকে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা বিশ্বাস করতে পারে না। অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিষদের মধ্যেও তারা বিদ্রোহীর ভূমিকা নিতে পারেন। যারা বিশ্বাসঘাতক, বিশ্বাস শব্দটি তাদের অভিধানে থাকে না। চক্রান্তের প্রথম পর্বেই হচ্ছে সন্দেহ রক্তপিপাসুদের হাতে নিহত হবার জন্যে মুষ্টিমেয় দু’চারজন ছাড়া কেহই যখন ইয়াহিয়ার বন্দীশালায় পা বাড়াবেন না, তখন তিনি পর্যায়ক্রমে বাতিলকৃত সদস্যদের তালিকার কলেবর বৃদ্ধি করবেন এবং সে সংখ্যা চার শতাধিক হয়ে দাঁড়ালে আশ্চর্য হবার কিছু থাকবে না। আর সে ক্ষেত্রে যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ ভিয়েতনামের নির্বাচনের রূপ নেবে ইয়াহিয়ার সর্বব্যাপী উপনির্বাচন। এই সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে “কমপিউটারকে ও জিজ্ঞেস করলে একই উত্তর পাওয়া যাবে। বাংলাদেশে হত্যাভিযানে যিনি প্রধান সেনাপতির দায়িত্বভার নিয়েছেন, সেই ইয়াহিয়া জানেন যে, যতো প্রলোভনই থাকুক না কেন লক্ষ লক্ষ দেশপ্রেমিকের মৃতদেহ মাড়িয়ে ইতিপূর্বে নির্বাচিত কোন সদস্য পরিষদকক্ষে প্রবেশ করবেন না। তিনি জানেন যে, মা-বাপ, ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে যারা হত্যা করেছে নির্বিচারে, তাদের সাথে সহযোগিতা করে দেশবাসীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্যে কেউ এগিয়ে যাবেন না। তিনি জানেন যে, শক্তিটি জানেন যে, দসু্য-হানাদারদের কবল থেকে সমগ্র বাংলাদেশকে উদ্ধার করার জন্য এরা সবাই স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত। এই রোগগ্রস্ত ভদ্রলোক এ-ও জানেন যে, বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার তার এই অপচেষ্টা নিদারুণভাবে ব্যর্থ হবে। (ফয়েজ আহমদ রচিত) ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ ছদ্মবেশীর ময়ূরপুচ্ছ খসে পড়েছে সামরিক ডিক্টেটর আয়ুব খানকে তাড়িয়ে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে তারই প্রধান সেনাপতি ইয়াহিয়া ১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চের রাত্রে যখন পিণ্ডির সিংহাসনের বসলেন, সে সময় এই মিথ্যাশ্রয়ী জেনারেল বিক্ষুব্ধ জনসাধারণকে শান্ত করার জন্যে সভ্য জগতের শাসকদের অনুকরণে কোমল ভাষায় দর্শনসম্মত বাণী উচ্চারণ করতে শুরু করেন। গণতান্ত্রিক নির্বাচন, জনগণের আশা-আকাঙ্খা প্রতিফলিত শাসনতন্ত্র ও ন্যায়নীতির শাসন প্রতিষ্ঠার কথা তিনি অহরহ প্রচার করতেন। এমন কি, “আমি জনগণের প্রতিনিধি নই- সৈনিক; জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যাবো এবং সামরিক সরকার হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন”- এ সমস্ত বক্তব্য ফলাও প্রচার করে জনগণের চিন্তাকে আচ্ছন্ন করে রাখতেন।