পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

150 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শতকরা ৬০ বা ৬৫টির অধিক আসন লাভ করতে পারবে না। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল শত্রর শানিতে অস্ত্রের ন্যায় ইয়হিয়ারে বন্ধে প্রোথিত হল। এই পরিস্থিতিটা ছিল সামরিক শাসকদের বিদায়ের ইঙ্গিতবাহী। কিন্তু সামরিক শাসক কোনদিন সম্মানের সাথে বিদায় নেন না- বিতাড়িত পশুদের ন্যায় পরাজয় হয়ে পলায়নই তার চরিত্র। ডিক্টেটরের চরিত্রের নির্দেশে ইয়াহিয়া চণ্ড রূপ নিয়ে হত্যার অভিযানে বের হলেন বাংলাদেশের নগরেবন্দরে-গ্রামে-গঞ্জে। বিদ্রোহের অগ্নিতে প্রজুলিত হয়ে উঠলো সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুখমণ্ডল। বিপ্লবী প্রত্যেকটি মানুষের লৌহ-পেশী বাহু দৃঢ়তার হয়ে উঠলো ঘৃণ্য আক্রমণকারী ভাড়াটিয়া সৈন্যবাহিনীর ধ্বংসের তাড়নায়। এতো হত্যা, এতো ধ্বংস আর নির্যাতনের বিভীষিকার মধ্যে তারা আজ দৃঢ়তর ক্ৰন্দনরত নয়, নয় স্থবির। তারা আজ স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ, নবচেতনায় উদ্ভাসিত মুক্তির দিশারী। শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর। কিন্তু এর পরও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রবঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে ইয়াহিয়া নানান অপকৌশল অবলম্বনে পথ বেছে নিয়েছেন। চক্ষু চিকিৎসককে করেছেন ক্রীড়নক গভর্নর, আর মন্ত্রী করেছেন দশজন ধিকৃত ও জনগণের আঘাত থেকে পলাতক পশুকে। তদুপরি নির্বাচত ১৮৪ জন সদস্যের পদ খারিজ করে উপ-নির্বাচনের নির্দেশে দিয়েছেন। ২৫শে নভেম্বর থেকে ৯ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এই উপনির্বাচনে হবে। আর এরই মধ্যে তিনি সামরিক নির্দেশে রচিত শানতন্ত্রের খসড়া প্রকাশ করবেন। তার মতের বাইরে উক্ত খসড়ার কোন ধারাই প্রস্তাবিত তথাকথিত পার্লামেন্টে বাতিল সংশোধন কথার ক্ষমতা থাকবে না। সম্ভবত ১৯৭২ সালের জানুয়ারীর পূর্বে তিনি পার্লমেন্টে আহবান করতে সাহসী হবেন বলে মনে হয় না। কিন্তু তার এই স্বেচ্ছাচারমূলক শাসনতন্ত্র রচনা ও অধিবেশন সবকিছুই একটা বিরাট “যদি’র উপর ঝুলছে। কার রাজত্ব তিনি শাসন-নির্যাতন-হত্যা অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে এইসব বিভ্রান্তির আয়োজন করার ঘোষণা করছেন, সে কথা পিণ্ডির “ব্রাসহ্যাট” গোষ্ঠী হয়তো জানেন। কিন্তু তার চাইতে ও সুস্পষ্টভাবে এই শ্রেণীর চক্রান্তের ফলাফল সম্পর্কে অবহিত রয়েছন বাংলাদেশের সংগ্রামরত নাগরিকগণ। ইয়াহিয়ার প্রতিশ্রুতি আর দেশদ্রোহীদের সমাবেশ দ্বারা অস্ত্রধারী সংগ্রামীদের স্তব্ধ করা যাবে না-সমগ্র নব-চক্রান্ত আজ সূর্যের মতো প্রখর। যার জীবনেতিহাস প্রবঞ্চনার বিষধারায় আচ্ছন্ন, মুক্তিকামী মানুষের ক্রুদ্ধ অস্ত্রের বর্ষণেই কেবল তার চক্রান্তের ফলপ্রসূ উত্তর। (ফয়েজ আহমদ রচিত) দর্পণ ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সম্প্রতি প্রখ্যাত ফরাসী সাহিত্যক ও কূটনীতিকে মসিয়ে আদ্রে মালর বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণকে সংগ্রামী ভিয়েৎনামী জনগণের মত জবাব দিতে বলেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে তিনি আমরণ যুদ্ধ তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্যে যুদ্ধ করছেন না- তাঁরা আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করছেন। মসিয়ে মালর দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানী জঙ্গী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তাতে জয় তাদের অনিবার্য।