পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

154 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শয়তানের মতো কালো মুখে নিক্ষেপ করবে রাশি রাশি কলঙ্কের কালি। তুমে যেখানেই যাও, যতো পদোন্নতিই তোমার হোক না কেন, শান্তিহীন, স্বস্তিহীন হবে তোমার দিবারাত্রি। বলো হত্যাকারী শয়তান, তোমার জবাব কি? কালো কলংকের বোঝা মাথায় দিয়ে, নৃশংস জালেম প্রস্তুত হও বলো, তোমার জবাব কি? জবাব দাও শয়তান ইয়াহিয়ার চেলা টিক্কা খান। (মুস্তাফিজুর রহমান রচিত) জনতার সংগ্রাম ৫ নভেম্বর, ১৯৭১ আমাদের বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা রচনা করেছে নয়া ইতিহাস। হরতাল, মিছিল আর বিক্ষোভের স্তর পার হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম যে মুহুর্তে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের রূপ নিয়েছে, সে মুহুর্তে জনতার মধ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে সশস্ত্র মুক্তিবাহিনী, অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে আপনাআপনি। ফুল ফুটলে যেমন সুগন্ধ বেরিয়ে আসে, ঠিক তেমনিভাবে। দুনিয়ার ইতিাহসে দেশের এমন ঘটনা অবশ্য ঘটেছে এর আগেও। ফ্রান্সে ঘটেছে ফরাসী বিপ্লবের সময়। রাশিয়াতে ঘটেছে সোভিয়েট বিপ্লবে। চীনে গণচীনের প্রতিষ্ঠায়। কিউবাতে ঘাটেছে চে গুয়েভারার গেরিলা সংগ্রামের ধারায়। আর ঘটেছে হো চি মিনের ভিয়েতনামে- সারা দুনিয়াকে আজও যা করছে বিস্মিত। কিন্তু বাংলাদেশে হরতাল, বিক্ষোভ আর মিছিলের স্তর পার হয়ে জনতার মুক্তিসংগ্রাম যত তাড়াতাড়ি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, এমনটি আর কোথাও হয়নি। চলতি ’৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে সারা বাংলাদেশ জুড়ে যে অহিংস গণঅসহযোগের কর্মসূচী অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়, তা যে দেখতে দেখতে অস্ত্ৰধারণের কর্মসূচীতে পরিণত হবে, মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে বিশাল পাকিস্তানী হানাদার সাঁজোয়া বাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করার দুর্দম অভিযানে পৌছতে পারবে, এ ধাণা হয়তো আগে করা যায়নি। কিন্তু এ ঘটনাই ঘটিয়ছে আমাদের বাংলাদেশ- আমাদের বাংলাদেশের জনতা- বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি বাসিন্দা। পাকিস্তানী শাসকচক্রের শোষণে জর্জরিত বাংলাদেশের নিরন্ন বুভূক্ষু সর্বস্তরের মানুষ, নরনারী-শিশু অবতীর্ণ হয়েছে আপোষহীন মুক্তিযুদ্ধে। মাত্র সাত মাসের মধ্যে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ আধুনিক অস্ত্র নিয়ে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শিখেছে। পাকিস্তানী সামরিক শাসকদের সমস্ত রকমের যোগাড়যন্ত্র করা আধুনিকতম মারণাস্ত্রে সজ্জিত সাঁজোয়া বাহিনী রিৎসক্রিগ বা বজ্রগতির যুদ্ধপদ্ধতিতে বাংলাদেশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেও বাংলাদেশের বিপ্লবী সংগ্রামী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে পারেনি। ফিউজ হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানী ব্রিৎসক্রিগ বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের একটিমাত্র অংশের কাছে মামুলি ধরনের অস্ত্র ছিল ২৫শে মার্চ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, বাঙালী ইপিআর আর বাঙালী পুলিশ বাহিনী এবং আনসার বাহিনীকে সামনে নিয়ে ভবিষ্যতে আধুনিক অস্ত্র পাবার আশায় বাংলাদেশের জনতা মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েই হানাদার পাকিস্তানী জল্লাদ বাহিনীর সামরিক সময়সূচীকে পণ্ড করে দিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে উদ্যোগ।