পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

159 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এখন চূড়ান্ত বিজয়ের পথে। যতই দিন যাচ্ছে, নৈতিকতাহীন, বর্বর হানাদার সেনাবাহিনীর মনোবল ও শক্তি ততই দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেশ-বিদেশের সংবাদপত্রে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই বিজয় ও সাফল্যের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিদিন। বিশ্বের সব প্রভাবশালী পত্রপত্রিকা মুক্তিযোদ্ধাদের সাফল্যের কথা স্বীকার করেছেন। নিউজউইক’ ও অন্যান্য পত্রপত্রিকায় মুক্তিবাহিনীর অগ্রগতি ও পাকিস্তানী হানাদার খান সেনাদের চরম নাজেহাল হওয়ার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশী সাংবাদিক ও সংবাদ ভাষ্যকারদের মতে, হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আর দীর্ঘদিন এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশে তাদের প্রভূত্ব বজায় রাখতে পারবে না, তাদের মৃত্যু আসন্ন ও অবশ্যম্ভাবী। এর পরেও মধ্যযুগীয় বর্বরতার নায়ক জল্লাদ ইয়াহিয়া তার মিথ্যা অপপ্রচারের দ্বারা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, কারণ তার খোয়াব ভাঙতে এখনো কিছু বিলম্ব। কিন্তু ইয়াহিয়া, তোমার খোয়াব যেদিন ভাঙবে, সেদিন দেখবে কি নিষ্ঠুর ভয়ঙ্কর বাস্তব তোমার সম্মুখে। দসু্য ইয়াহিয়া বাংলাদেশে পুতুল সরকার খাড়া করে বিশ্বকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি একজন বিদেশী সাংবাদিক ঢাকা ঘুরে এসে তার বাংলাদেশ পরিভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পুতুল মন্ত্রিসভার যে ঠাঁট ইয়াহিয়া দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন, বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে তার কোনো অস্তিত্বই নেই। মন্ত্রী সাহেবরা থাকেন মিলিটারি ক্যান্টনমেন্টে। হাজার চেষ্টা করেও তাদের সাক্ষাৎ মেলেনি। আর বাংলাদেশের মালেক মন্ত্রিসভার কোনো আছে অস্তিত্ব বলেও মনে হয় না। এইসব মন্ত্রীদের জনসাধারণ কেউ চেনে না। বরং সেখানকার প্রকৃত অবস্থা অন্যরূপ। মৃত্যু, নির্যাতন সবকিছু উপেক্ষা করে ঢাকার হওয়ার জোগাড়। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের প্রবল চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানে সামরিক সাজসরঞ্জাম রপ্তানির লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী ঘোষণায় এই তথ্য জানা গেছে। এদিকে চীনে গিয়ে মি. ভুট্টো বড়ো বেশি কন্ধে পাননি। বরং চীনা অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিং পেং ফেই বাংলাদেশ সমস্যার যুক্তসঙ্গত সমাধানের প্রতিই পাকিস্তানকে সচেষ্ট হতে বলেছেন। ফরাসী সরকার বাংলাদেশ সমস্যার প্রতি অধিক মনোযোগী হয়েছেন এবং এর গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সাম্প্রতিক ফ্রান্স সফরকালে ফরাসী সরকারের পক্ষ থেকে এই মতামত প্রকাশ করা হয়। পশ্চিম জার্মানীর চ্যালেন্সর উইলি ব্রান্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাধানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পশ্চিম সরকারের এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ঘটনাবলীতে পশ্চিম জার্মান সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের মানুষ মরছে, গৃহ অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে। এখনো দলে দলে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের জীবনে এখনো অন্ধকার রাত্রির শেষ হয়নি। তারা সকল চোখে অসহায় দুটি হাতে তুলে তাকিয়ে আছে সত্য ও ন্যায়ের অমোঘ দণ্ড করে নেমে আসবে, কবে, কবে। কবে শেষ হবে এই কালরাত্রির কুটিল অন্ধকার? শেষ এর হবেই। এতো রক্ত, এতো মায়ের চোখের জল, বুকফাটা কান্না, সকরুণ প্রার্থনার বাণী ব্যর্থ হতে পারে না : বীরের এ রক্তস্রোত মাতার ও আশ্রমধারা এর যতো মূল্য সেকি ধরার ধূলায় হবে হারা? স্বর্গ কি হবে না কেনা বিশ্বের ভাণ্ডারী শুধিবে না এত ঋণ?