পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

164 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড টাকা-পয়সা আদায় করছে। যারা তাদের আশ্রয় দিতে বা মেয়েলোক সরবরাহ করতে অস্বীকার করছে তাদেরকে হত্যা করছে গুলি করে। এরপর মুক্তিবাহিনীর দুর্জয় অভিযানের সামনে সেনাবাহিনী প্রথমেই ঠেলে দিচ্ছে এইসব নিবোধ রাজাকারের দলকে।” এসব সত্ত্বেও জেনারেল নিয়াজীর লম্বা-চওড়া দাবি কেন? নিউজউইকের মতে, পরাজয়ের গ্রানি কিছুটা লাঘবের জন্য জেনারেলের জল্লাদ বাহিনী নিরীহ-নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে, ব্যাপকাকারে চালাচ্ছে লুটতরাজ। সংবাদদাতা ঢাকার ডেমরা এলাকার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইয়াহিয়ার সৈন্যদল এই গ্রামটি ঘেরাও করে ১২ থেকে ৩৫ বছরের প্রত্যেকটি মহিলার উপর পাশবিক অত্যাচার চালায় এবং ১২ বছরের উপরের সকল পুরুষকে হত্যা করে। এই হত্যা, লুণ্ঠন ও পাশবিকতায়ও শেষরক্ষা যে অসম্ভব, বাংলার দিগন্তবিস্তৃত মাঠ আর পদ্মা-মেঘনা-যমুনার উত্তাল তরঙ্গমালার দিকে একবার তাকালেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ২৮ নভেম্বর, ১৯৭১ মিথ্যোবাদী রাখালের কান্নায় ভিজে তার মহাপ্ৰভু শ্বেতপ্রাসাদ থেকে একেবারে দূরপাল্লার টেলিফোন করে বসেছেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে। অভিপ্রায়- কিভাবে বাঁচানো যায় রাখালটিকে। স্বস্তি পরিষদের বৈঠক-টৈঠক কিছু করা যায় কিনা, তারই শলাপরামর্শ নাকি চলছে। হাজার হলেও এই রাখাল আর তার দেশ দীর্ঘদিন ধরে সাথে সাথে আছে সবকিছুতেই। সেই বাগদাদ চুক্তি, সিটো আর পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি থেকে শুরু করে সব সময়ে দুদিনে-সুদিনে পাশ্চাত্যের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে পিণ্ডির জঙ্গীচক্র। ৫৮ সালের ইরাকী বিপ্লবের পর বাগদাদ জোট থেকে খোদ বাগদাদ খসে পড়ার পরও পিণ্ডির জঙ্গীচক্র উৎসাহী দোসর হিসাবে পাশ্চাত্যের সাথে থেকেছে সেন্টো চুক্তির বাঁধনে। আর এশিয়ার মাটিতে পরিবর্তনের ঢেউ বয়ে গেলেও পিণ্ডির জল্লাদের দল কোন সময়েই সিটো জোট থেকে সরে দাঁড়ায়নি। অতএব এ ধরনের একটি বিশ্বস্ত দালালকে তো রক্ষা করতেই হবে। কিন্তু মুশকিল হয়েছে জাতিসংঘ নামক সংস্থাটির সনদ নিয়ে। এই সনদ অনুযায়ী একমাত্র আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মত অবস্থা দেখা দিলেই শুধু স্বস্তি পরিষদ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও পিণ্ডির জঙ্গীচক্র এখনও এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি, যাকে আন্তর্জাতিক শান্তি বিপন্ন হওয়ার মত পরিস্থিতি বলে অভিহিত করা চলে। অন্যদিকে জঙ্গীচক্রের বরকন্দাজেরা একথা ক্রমান্বয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে যে, বৈদেশিক হামলা-টামলা নয়, মুক্তিবাহিনীর দুর্বার আক্রমণেই এখন তারা চোখে সর্ষের ফুল দেখতে শুরু করেছে। বরকন্দাজ দলের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জেনারেল নিয়াজী তো খোলাখুলিভাবে বলেই ফেলেছেন যে, একমাত্র ঢাকাতেই দু'হাজার গেরিলা সক্রিয় রয়েছে। আর রেডিও গায়েবী আওয়াজ বলছে, যশোরের চৌগাছার কাছে লড়াই চলছে। তবে কিনা মুক্তিবাহিনী এখনও সরাসরি যুদ্ধ করার পর্যায়ে যায়নি। আতএব জঙ্গীচক্র শীঘ্রই চৌগাছা আবার দখল করতে পারবে-এই তাদের আশা বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে রেডিও গায়েবী আওয়াজ এটা প্রচার করলেও একটি সত্য সকলের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায়- চৌগাছায় মুক্তিবাহিনীর সাথেই জল্লাদ দলের লড়াই চলছে। অতএব বৈদেশিক আক্রমেণর জুজুটা যে একেবারেই নির্জলা মিথ্যা, এটা রেডিও গায়েবী আওয়াজও স্বীকার আইন-কানুনেই তা স্পষ্টই ধোপে টেকে কি করে? বাংলার মানুষের মুক্তিসংগ্রোমের আট মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এই দীর্ঘ আট মাসের তীব্র ও তিক্ত সংগ্রামকালে যাদের মুখ থেকে এমনকি সমবেদনার একটি কথাও শোনা যায়নি। আজ তারা এতই উদ্বিগ্ন যে, স্বস্তি পরিষদে হাজির হওয়ার কথা পর্যন্ত ভাবছেন। অবশ্য মিথ্যেবাদী রাখালটিকে নিয়ে শ্বেতপ্রসাদের মহাপ্রভুরা উদ্বেগে আজ সোচ্চার হলেও নতুন কিছু নয়।কিছুদিন আগে ছ’জন সদস্যকে নিয়ে একটি তদন্তদল গঠনের কথা তারা ঘোষণা করেছিলেন। এটার মাধ্যমে তারা আসর জাঁকাতে চেয়েছিলেন। ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দফতর থেকে ঐ রাখাল বালকটিকে কিছু কিছু সুপরামর্শও দেয়া হয়েছে। এবং সেই অনুযায়ী বাংলার গভর্নর পদে আবদুল মোতালিব