পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

172 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড সেনা মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে- পশুদের উষ্ণ তাজা রক্তে সেনাহাটির মাটি তৰ্পণ করছে। এক সময় পশ্চিম দিকের মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি চালনা থেমে যায়। এই সুযোগে অবশিষ্ট হানাদারদের গানবেটে পালিয়ে গেলঃ পেছনে ফেলে গেল ১০-১২ খানা গানবেটি ও অসংখ্য আধুনিক মারণাস্ত্র।” এই যুদ্ধে আমিন শহীদ হন। আমরা জানি ইতিমধ্যে শত্ররা তেতুলিয়াসহ বহু জায়গায় পরাস্ত হয়ে পালিয়ে গেছে। আমিনের আত্মত্যাগ সম্পর্কে পত্রিকাটি মন্তব্য করেছেন। “আমিন মরেনি, আমাদের মাঝে ও বেঁচে আছে-বেঁচে আছে বাংলার মাটির সাথে, মিশে আছে তেতুলিয়ার উদাম তীরভাঙ্গা পাগলা ঢেউগুলোর সাথে, যা কোন দিনই বাংলা মায়ের কাছ ছাড়া হবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে আবার সবাই যে যার ঘরে ফিরে যাবে-ফিরে যাবে সেই ছোট গ্রাম সোনাহাটিতে। সেই গ্রামে অজস্র ঝরা বকুল ফুল কবরটাকে ঢেকে রেখেছে। মিষ্টিমধুর গন্ধে মাতোয়ারা মৌমাছি উড়ে বেড়াচ্ছে গাছটাকে ঘিরে, লক্ষ আমিন জন্মেছে বাংলাদেশে। আমিনরা কোনদিন মরবে না, আমিনরা কোনদিন মরে না। দৃষ্টিকোণ ১৫ডিসেম্বর, ১৯৭১ পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের হবু বেসামরিক সরকারের হবু উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্টমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টোর জাতিসংঘ প্রাসাদ চত্বরে পদার্পণের সাথে সাথেই হাজার মাইল দূরের ভিয়েৎনামের টনকিন উপসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের পদচারণা শুরু হয়ে গেছে। গন্তব্যস্থল অনিদিষ্টি বলে উল্লেখ করা হলেও আপাতত উদ্দেশ্য নাকি ঢাকার মার্কিন নাগরিকের উদ্ধার করা। ঢাকার মাত্র কয়েক শ’ মার্কিন নাগরিক উদ্ধারের জন্য সপ্তম নৌবহরের পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী জাহাজ এন্টারপ্রাইজ ন্যায় রণপোতকে ব্যবহার করতে হচ্ছে এই খোঁড়া অজুহাতটি দুগ্ধপোষ্য বালকেও বিশ্বাস করবে না। তা ছাড়া মার্কিন নাগরিকরা হয়তো ইতিমধ্যেই ঢাকা ছেড়ে গেছেন। তাই সপ্তম নৌবহরের এই আকস্মিক আনাগোনা বা শক্তি প্রদর্শনের পেছনে নিশ্চয়ই অন্য কোন অভিসন্ধি রয়েছে, এটা সকলেই স্বাভাবিকভাবে সন্দেহ করবেন। এদিকে দিয়ে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের ন্যস্কারজনক কীর্তিকলাপের রেকর্ড কেউ বিস্তৃত হবেন না। মার্কিন সমর দফতর পেন্টাগনের গোপন দলিলপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়ার পর দুনিয়ার মানুষ জেনেছেন কিভাবে বিনা প্ররোচনায় এই সপ্তম নৌবহর টনকিন উপসাগরে থেকে উত্তর ভিয়েতনামের উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। এখনও ভুলে যাওয়ার কথা নয়, ১৯৫৬ কোরিয়া যুদ্ধে মার্কিন হানাদার বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ম্যাকআরথারের নৌবহর বলে পরিচিত এই সপ্তম নৌবহরকে কোরিয়ার হামলা চালানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ! লোক অপসারণের নামে এরা অবতরণ করেছিল ১৯৬২ সালে থাইল্যাণ্ডে। পর্যবেক্ষকরা তাই ১২৫টি জাহাজ, ৬৫০টি বিমান ও ৬৫ হাজার নৌসেনা গঠিত এই সপ্তম নৌ-বহরকে উনবিংশ শতাব্দীর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গানবেটের সাথে তুলনা করেছেন। অতএব অবরুদ্ধ মার্কিন নাগরিক উদ্ধারের অজুহাত যে একেবারেই বাজে একথা বলাই বাহুল্য মত্র। ভারত সরকারের জনৈক মুখপাত্র ইতিমধ্যেই তাই বলেছেন” মানসিক চাপ সৃষ্টির জন্যই মার্কিন সপ্তম নৌবহরের এই পদচারণা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন প্রশাসনের পিণ্ডি-প্রেম বর্তমানে প্রায় চরম পর্যায়ে উপনীত হলেও একেবারে নতুন কিছু নয়। দুনিয়ার সকল জাতির মুক্তি আন্দোলনের বিরোধিতায় সবার আগে এগিয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে পিণ্ডির জল্লাদ দলের গণহত্যা তথা এক কোটি বাঙালীর পৈত্রিক ভিটেমাটি থেকে উৎখাতের ব্যাপারে