পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

175 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড দীক্ষা নিয়ে শাসক। শ্রেণীর মিথ্যার বেসাতির কারখানাগুলোকে সাফ করে দিয়েছিল আগুনের লেলিহান শিখায়। বাংলার মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি দাবীতে ঘেরাও করেছিল ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট। সাজানো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মিথ্যা নথিপত্র সমেত পুড়েছিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এস. এ রহমানের বাসভবন। বাঙালী গৃহভূত্যের মহানুভবতায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। ১৮ই ফেব্রুয়ারীর রাত। ঢাকার মানুষের সংগ্রামের ইতিহাসে সে এক অনন্য রাত। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে মুখোমুখি মোকাবিলা করেছে নিরস্ত্র মানুষ সারা রাত। অবরোধ করে রেখেছে ঢাকা নগরীকে। কারফিউর বিধিনিষেধ দিয়েছে উড়িয়ে। মেশিনগানের গুলির মুখে বুক পেতে দিয়েছিল তারা। শ্লোগানে শ্লোগানে ঝংকৃত ঢাকা নগরীতে সে রাতে হৃদকম্প উপস্থিত হয়েছিল আইয়ুবের বেতনভুক সেনাবাহিনীর রক্তের বিনিময়ে মানুষ তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করে এনেছিল ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ধন্য হয়েছিল তারা। তারপর মার্চের অবিস্মরণীয় অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলিতেও ঢাকা আপন মহিমায় থেকেছে অম্লান বস্তুতঃপক্ষে ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মূলতবি ঘোষণা করলে ঢাকার মানুষই প্রথমে ছুটে গিয়েছিল তাঁদের নেতার কাছে নির্দেশের জন্য। ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে তখন বৈঠক চলছিল বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ কার্যকরী কমিটির নির্দেশ এলো সর্বাত্মক গণঅসহযোগ আন্দোলনের। কারখানার চিমনিতে ধোঁয়া উড়লো না। ট্রেনের চাকা গেল থেমে। লঞ্চ-স্টীমার স্তব্ধ। বাসট্যাক্সি-রিকশা চললো না। এমন যে সাধের পিআইএর বিমানগুলোও মুখ থুবড়ে পড়ে থাকলো মাটিতে। মিছিলে পতাকায় ব্যানারে ফেস্টুনে শ্লোগানে সে আরেক ঢাকা পিণ্ডির শাসক-চক্রের বাংলাদেশবিরোধী অনড় মনোভাবের মুখে ঢাকার মানুষই প্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন একটি নতুন জাতীয় পতাকার, নতুন জাতীয় সঙ্গীতের মিছিলের বজ্ৰমুঠিতে সেদিন উচ্চকিত হয়েছিল একটি নতুন জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রথম শপথ। কারফিউ দিলে রাস্তায় নামে। কাউকে ডাক দিতে হয় না। পায়ে পায়ে এগিয়ে যায়। আওয়াজ তোলে । গুলিতে বুক পেতে দেয়। আবার শ্লোগানে কাঁপিয়ে তোলে আকাশ-বাতাস। অবরুদ্ধ ঢাকা নগরীতে এখনও সে মানুষ আছে। পিণ্ডির জল্লাদ দলের পাশবিক হামলাকে বিশেষ এক অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা মুখ বুঝে সহ্য করেছে। গত নয় মাস শুধু সেই বিশেষ মাহেন্দ্রক্ষণটি প্রতীক্ষায়, যখন তারা ফেটে পড়তে পাড়বে আগ্নেয়গিরির মত। নাদিরশাহের সুযোগ বংশধর জল্লাদ সরদার ইয়াহিয়া খাঁর পাইকবরন্দাজের দল মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে যে বিভীষিকাই কায়েম করুক না কেন, ঢাকায় তাদের নিস্তার নেই। (লেখকের নাম জানা যায়নি) রাজনৈতিক মঞ্চ ৪ অক্টোবর, ১৯৭১ পূর্ব বাংলা-পূর্ব পাকস্তান- বাংলাদেশ। এ রূপান্তর ২৫শে মার্চের সেই কালো রাতে নিরীহ নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী মানুষের উপর ইয়াহিয়ার ঘাতক দলের উন্মুক্ত আক্রমণের ফলে চূড়ান্ত রূপ নিলেও বিগত ২৫ বছরের অনেক বঞ্চনা আর রক্তঝরা ইতিহাস জমাট বেঁধে ছিল এর পিছনে। বাংলাদেশে গণপজাতন্ত্রী সরকার