পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

178 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৬। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র | শব্দসৈনিক’, ফেব্রুয়ারী, ১৯৭২ আগষ্ট-ডিসেম্বর,১৯৭১। প্রচারিত আরও কয়েকটি নিয়মিত কথিকা দর্পণ ২৬ আগষ্ট, ১৯৭১ ক্যাম্পে বসে বসে সে তার পুরানো দিনগুলোর কথা ভাবছিল। সেই নদী, শীতের সকাল, গ্রামকে বিলুপ্ত পরান মাঝির চোখ-এক এক করে সব কথাই মনে পড়ছে। প্রথম যেদিন বন্দুক থেকে গুলি ছুড়েছিল সেদিনের কথাও । সোনাগাছির চর পাখী শিকারের জন্য বিখ্যাত। শীতকালে নদী ক্রমশঃ শুকিয়ে এলে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চর পড়ে। এই চর থেকে প্রায় মাইল তিনেক দূরে তোরণের বাড়ি। বাড়ি বলতে অবশ্য ছোট দুটি কুড়েঘর, একট আমগাছ, গোটা কয়েক সুপারি গাছ চালের উপর সারা বছর কুমড়ো গাছের লতা ছেয়ে থাকে। শীতের গেছে। ঘাটে বাঁধা নৌকায় নদী পার হয়ে, চরের শিশির ভিজে ওঠা বালুর উপর দিয়ে আরও মাইল খানেক হাঁটার পর এলোমেলো চরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটা খালের পাড়ে এসে দাঁড়াত। খালের পাশেই বালুর উপর দুটো ছই পাতা। তার একটাতে খড়ের উপর কাঁথা মুড়ি দিয়ে বৃদ্ধ পরান মাঝি তখনও ঘুমাচ্ছে। তোরণ তাকে ডেকে তুলতো। খালে বেড় দিয়ে মাছ ধরার যন্ত্র সারারাত পেতে রাখা হত; তোরণ আর পরান দু’জনে মিলে গামছা পরে সব মাছ খাঁচিতে ঝেড়ে তুলতো। তারপর তোরণ নিজ হাতে ছোট ছোট কাঠের টুকরো দিয়ে মালসা জুলিয়ে তাতে দুজনেই হাত-পা সেঁকে নিত। পরান নিজ হাত হুকো ধরিয়ে হাত-পা সেঁকতে সেঁকতে আয়েশ করে খোঁচা খোঁচা মুখে ধোঁয়া ছাড়ত। এরপর একটা বাঁশের টুকরোর দু’পাশে দুটো খাঁচি বেঁধে নিয়ে নদীর ঘাট পার হয়ে কুয়াশা ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে যেত গঞ্জের দিকে। মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পের বাইরে রাতের অন্ধকারে বসে থাকা তোরণের এক এক করে অনেক কথাই মনে পড়ল। তখন ওর বয়স প্রায় ২৩ বছর। বছর নীয়েক পূর্বে ওর বাবা মারা গেছে। সংসারে একমাত্র বৃদ্ধ মা ছাড়া আর কেউ নেই। পনের বছর বয়স থেকে সে পরান মাঝির সাথে কাজ করে। বৃদ্ধ পরান তাকে ছেলের চেয়েও বেশী স্নেহ করত। সে শীতের সেই সকালগুলোর কথা ভাবছিল। পরান গঞ্জের দিকে বেরিয়ে গেলে, তোরণ মালসার পাশে বসে নতুন করে হুকো ধরিয়ে পরানের মত ভঙ্গিতে টানতো। ক্রমে ক্রমে কোন দিন কুয়াশা আরও পাতলা হয়ে আসত, কোন কোন দিন আরও ঘন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চরের বালু পর্যন্ত বিলুপ্ত করে দিত। সূর্য উঠবে উঠবে পায়ের ছাপ পড়তে শুরু করত। এবং তাদের সবাইকে যেতে হ’ত পরান মাঝির মাছ ধরার জায়গার উপর দিয়ে। তারপরই বিস্তীণ চর-যেদিকে খুশী চলে যাওয়া যায়। এইসব শিকারীদের একজনের কাছ থেকে সে প্রথম বন্দুক চালান শেখে।