পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

183 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড সর্বপ্রকার চেষ্টা করা হয়েছে। এদিকে বাংলার যে সোনালী আশে পশ্চিম পাকিস্তানটা গড়ে উঠলো তাকেও শেষ করার চেষ্টা করা হয়। পাটচাষ ও পাটচাষীদের কৃত্রিম অসুবিধে সৃষ্টি করা হয়। ১৯৪৯ সালে টাকার অবমূল্যায়ন নিয়ে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে বিরোধ বাধিয়ে বসায় ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের পাটের বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেল এবং তাতে পাটচাষীরা ডুবে গেল। শিল্পক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পুরোপুরি বঞ্চিত করা হলো। সুতীবস্ত্র, পশমীবস্ত্র, ইস্পাত, কাগজ, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি ও মেশিনারী শিল্প-কারখানাগুলোর মধ্যে সবগুলোই করা হলো পশ্চিম পাকিস্তানে পূর্ববাংলায় বা বাংলাদেশে যা করা হলো তা অত্যন্ত নগণ্য, এবং তা করা হলো পশ্চিম পাকিস্তানী বণিক পুঁজিপতি তথা কায়েমী স্বার্থবাদীদের স্বার্থেই। সরকারি খাতে বাংলাদেশে শিল্প বিনিয়োগ প্রায় শূন্যের কোঠায় রয়ে গেল। বেসরকারি বিনিয়োগ আরও শোচনীয়। সারা পশ্চিম পাকিস্তানকে সরকারি ও সরকরি সাহায্যপুষ্ট বেসরকারি শিল্প কারখানায় ভরে তোলা হলো। বাংলাদেশ হয়ে গেল পশ্চিম পাকিস্তানী শিল্পপণ্যের বাজার। শুরু হলো বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ শোষণ। বাংলাদেশ পৃথিবীর বাজারে পাট বিক্রি করে ও চা বিক্রি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা পেতো তার শতকরা আশি ভাগেরও বেশি খরচ করা হতে লাগলো পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্প উন্নয়ন ও শিল্প সম্প্রসারণের কাজে। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকদের স্বার্থে বিদেশ থেকে সাধারণের প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানি বন্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তানী শিল্পপতিরা নিজেদের কারখানায় উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী অত্যাধিক চড়া দরে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করলো তাদের দ্বিমুখী শোষণ। রফতানি ও বৈদেশিক সাহায্যের সবখানি ফল ভোগ করতে লাগলো পশ্চিম পাকিস্তান। অতএব, দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়েছে। তা যদি না দেয়া হতো তাহলে আর যাই হোক বাংলাদেশকেও ওদের কলোনীতে পরিণত করতে পারতো না। অবশ্য এ সবই হচ্ছে আজ গৌণ বিষয়। আজকের দিনের বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ পাকিস্তানীদের দীর্ঘদিনের শোষণের নাগপাশ ছিন্ন করে নিজেদের নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে স্বাধীন সার্বভৌগ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠন করেছে। দেশ থেকে হানাদার পাকিস্তানী সামরিক দস্যদের সম্পূর্ণ নির্মুল করার মহান লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা দ্রুতগতিতে। (সাদেকীন রচিত) জনতার সংগ্রাম ১৪ নভেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমি যতদিন শত্রু কবলিত থাকবে ততদিন আমাদের এই স্বাধীনতা সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। চূড়ান্ত জয়ের পূর্বে এই যুদ্ধ আর থামবে না। এবং এই যুদ্ধে আমাদের জয় অবশ্যম্ভাবী। এই কথাগুলো আজ আর উচ্ছাস বা ভাবাবেগে চালিত নয়, এই কথার সত্যতা আজ প্রতিটি বাঙালীর ধমনীতে প্রবাহিত। বিশ্ববাসীও বিস্ময়ে লক্ষ্য করছে বাঙালীর এই অভূতপূর্ব সংগ্রামের সাফল্যের দিকে। তৎপর। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে পার্শ্ববর্তী চাষী ভাইয়ের দিকে মুখ তুলে বলে ওঠে, পশ্চিম পাকিস্তানী শত্রসৈন্যরা যতদিন আমাদের সবুজ মাটিতে আছে ততদিন আর শান্তি নেই। তার রক্ত জল করে উৎপাদিত