পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| 85 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড রাতদিন প্রাণপণ চেষ্টা করে যেতে হবে। সকল বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে যেতে হবে যাতে শত্রু এক মুহুর্তের জন্যেও অবকাশ না পায়।” তিনি আরো বলেছেন, “আপনাদিগকে দলমতনির্বিশেষে সকল পার্থক্য ভুলে প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে, পরিকল্পনা প্রস্তুতি নিতে হবে, শত্রর উপর আঘাত হানতে হবে, এবং শত্রকে ধ্বংস করতে হবে। শেষ শত্রটি ধ্বংস না করা পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না।” -এই যুদ্ধ তাই প্রত্যেক বাঙালীর যুদ্ধ, এই মুক্তিযুদ্ধে তাই অংশ নিয়েছে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ, সর্বস্তরের মানুষ নিয়ে সংগঠিত হয়েছে মুক্তিবাহিনী। তারা রাতদিন চেষ্টা করছে। নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দৃঢ় মনোবল আমাদের সহায়। আমাদের অস্ত্র যোগাবে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে পাওয়া শত্রর হাতের অস্ত্র। এবং মুক্তিবাহিনী যুদ্ধ করছে শত্রর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্র দিয়েই। এমনিভাবে মুক্তিবাহিনীর অপ্রতিহত অগ্রগতি চলছে দুর্বার ও দুর্দম গতিতে; তারা আর থামবে না, কোনদিন থামবে না। দেশকে শত্রমুক্ত করার পূর্বে, চূড়ার বিজয়ের পূর্বে এই যুদ্ধ থামবে না। কারণ প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা জানেন আমি সেই দিন হত শান্ত যবে উৎপীড়িতের ক্ৰন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না; অত্যাচারীর খড়গ-কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না। (বিপ্রদাস বড়ুয়া রচিত) অভিযোগ*

  • * * * * ՀէbԳՖ

বাঙালীর মনোবল ভাঙতে ত্রাস সৃষ্টির জন্যে ধ্বংসযজ্ঞের প্রথম ক'দিন হাজার হাজার বাঙালীর লাশ ওরা পথে-ঘাটে ছড়িয়ে রাখলো। সংসার-নিম্পূহ ডক্টর গোবিন্দ দেব, আমার বন্ধু অধ্যাপক জ্যোতির্ময়, ডক্টর মনিরুজ্জামান, সপ্ততিবষী আইনজীবী ধীরেন্দ্র দত্ত, নব্বই বৎসরের ভিষগাচার্য যোগেশ ঘোষ, মিউনিসিপ্যালিটির মেথর, ষ্টেশনের কুলি, নৌকার মাঝি, ক্ষেতের চাষী, নদীর জেলে, গায়ের তাঁতী, ঘাটের ধোপা, পথের নাপিত, হাটের পশারী, গঞ্জের মহাজন, মসজিদের ইমাম, গীর্জার পাদ্রী, মন্দিরের পুরোহিতসাধারণ থেকে অসাধারণ সকল শ্রেণী-ধর্মের নিরীহ বাঙালীর শবদেহ অসনাক্তভাবে কুকুর-শকুনের ভক্ষ্য হল সকলের চোখের সমানে। মনুষত্বের এতবড় অবমাননা ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তান ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও সম্ভব হতো বলে আমি বিশ্বাস করি না। আর সেই জন্যেই বোধ করি এই অমানুষিক বর্বরতা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবু বলব, দুস্কৃতি দমনের নামে যারা বাঙালীর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি লুট করল, জাহাজ ভর্তি নতুন নতুন গাড়ী, টেলিভিশন, রেডিও, রিফ্রিজারেটর, এয়ারকুলার ব্যক্তিগত মালিকানায় পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার করল, কোটি কোটি টাকার অর্থ, অলংকার প্রকাশ্য মানি অর্ডার, পার্সেল অথবা পি-আই-এ কার্গো মারফত নিজের নিজের এলাকায় পাঠিয়ে দিলো, হাজার হাজার অবাঙ্গালীর হাতে মারণাস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বাঙালীর শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাসের পরিমণ্ডল থেকে চিরনির্বাসনের সড়ক তাঁরা নিজেরাই প্রশস্ত করে নিলেন।

  • কবি সিকান্দার আবু জাফর ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই একটি অভিযোগ-ইশতেহার প্রকাশ করেন। এটি পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত হয়। এখানে তার অংশবিশেষ সংকলিত।