পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

187 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড জাতীয়তাবাদকেই আমি বলিষ্ঠ আকৃতি দেবার চেষ্টা করেছি। এর কারণ, প্রথম থেকেই বাঙালীর সমস্যা স্বাক্ষরিত, বাঙালী জাতীয়তাবাদ বর্জনের তাগিত। এই তাগিদ এসেছে প্রধানতঃ দ্বিজাতিতত্বের প্রবক্তা এবং তাদের অনুগামী গোষ্ঠীর কাছ থেকে, পাকিস্তান যাদের মুষ্টিমেয় কয়েকজনের স্বার্থে এক উজ্জ্বল সূর্যসম্ভাবনায় পরিণত হয়েছে। এদের প্রায় অধিকাংশই পশ্চিম পাকিস্তানী শিল্পতি এবং পাকিস্তানী জঙ্গীযন্ত্রের পরিচালক। দেশ-বিভাগের প্রথম দিন থেকেই এরা বাংলাদেশকে চিরস্থায়ী উপনিবেশে পরিণত করার চক্রান্তে বাঙালী জাতীয়তাবাদ সমূলে উৎখাত করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে এবং সেই একই দিন থেকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ব্যর্থতা উপলব্ধি করে বাঙালী যতই লুষ্ঠিত, নিগৃহীত এবং অপমানিত হয়েছে ততই হাজার বছরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ জাতীয়তাবোধ তার কাছে উজুল হতে উজ্জ্বলতর দীপ্তিলাভ করেছে। বস্তুত পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকচক্রের একমাত্র উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্য-নরহত্যা, লুণ্ঠন এবং নারীধর্ষণের অভিজ্ঞতা আর স্বাধীনতা লাভের আগে দীর্ঘ দুই শতাব্দী শৃঙ্খলিত শিকারী কুকুরের মত ঔপনিবেশিক প্রভুর পদলেহনের কৃতিত্ব। বাঙালীর আত্মমর্যাদা এই চক্রের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে কোনদিনই তাকে আত্মহননের উদ্দীপ্ত করতে পারেনি। কাজেই পশ্চিম পাকিস্তানী ঘাতকেরা আজ বাংলাদেশে যে নির্বিচার গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তার পরিকল্পনা সূচীত হয়েছে স্বাধীনতা লাভের প্রথম দিনটি থেকে। আর সার্বিক অবলুপ্তির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাঙালীর পক্ষে আত্মসংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই। শিক্ষক হিসেবে যাদের প্রতিষ্ঠা এবং প্রশ্নাতীত মর্যাদা, তারা আজ শুধুমাত্র পেশাদার চাকুরে। ডাক্তার কিম্বা ইঞ্জিনিয়ার, বিচারপতি কিম্বা আইনজ্ঞ হিসেবে নিজের নিজের কৃতিত্বে যারা গোটা দেশের জন্যে অপরিহার্য তারা আজ অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তির গোলকধাঁধায় আত্মবিস্তৃত, চাষী-মজুর বাস্তুহারা, দিশাহারা। সরকারী কর্মচারী আজ নিরক্ষর সিপাই প্রভুর ভ্ৰকুটিলাঞ্ছিত মর্যাদাহীন হুকুমের নফর। ব্যবসায়ী-শিল্পপতি আজ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুর্ভাবনায় নিস্পিষ্ট নিরূপায় সরীসৃপ। ছাত্রছাত্রীরা আজ উদ্দেশ্যহীন আকাংক্ষাহীন। এমন সামগ্রিক মৃত্যুর আবর্তে কোন জাতি নিজেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে না। তাই বাঙালীর ঘরে যত ভাইবোন আজ অগণিত আত্মপরিজনের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লাশের সামনে দাঁড়িয়ে এক বেদনায় একাত্ম হয়েছে, এক প্রতিজ্ঞায় বাহুবদ্ধ হয়েছে- মৃত্যুর বিনিময়-মূল্যেই তারা মৃত্যুকে রোধ করবে। বাংলার মাটিরে পূণ্য-পীযুষধারায় সঞ্জীবিত প্রাণ একটি বাঙালী বেঁচে থাকতে বাংলাদেশের এই মুক্তি-সংগ্রাম শেষ হবে না। (সিকান্দার আবু জাফর রচিত) চরমপত্র .S$83 মেজিক কারবার। ঢাকায় অখন মেজিক কারবার চলতাছে। চাইরোমুড়ার থনে গাবুর বাড়ি আর কেচকা মাইর খাইয়া ভোমা ভোমা সাইজের মছুয়া সোলজারগুলো তেজগাঁ-কুর্মিটোলায় আইস্যা- আ-আ-আ- দম ফেলাইতেছে। আর সমানে হিসাবপত্র তৈরি হইতাছে। তোমরা কেডা? ও-অ-অ-ভৈরব থাইক্যা আইছো বুঝি? কতজন ফেরত আইছো? অ্যাঃ ৭২ জন। কেতাবের মধ্যে তো দেখতাছি- লেখা রইচে ভৈরবে দেড় হাজার পোস্টিং আছিলো। ব্যাস ব্যাস আর কইতে হইবো না- বুইজ্যা ফালাইছি। বাকীগুলোর বুঝি হেই কারবার হইয়া গেছে। এইডা কি? তোমরা মাত্র ১১ জন কীর লাইগা? তোমার কতজন আছিলা? খাড়াও খাড়াও- এই যে পাইছি কালিয়াকইর-১২৫ জন। তা হইলে ১১৪ জনের ইন্নালিল্লাহে ডট ডট ডট রাজেউন হইয়া গেছে। হউক, কোন ক্ষতি নেই। কামানের খোরাকের লাইগ্যাই এইগুলর বাঙ্গালমুলুকে আনা হইছিলো। আরে এইগুলি কারা? যশুরা