পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

19| বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ইয়াহিয়া খানের অর্থ-উপদেষ্টা মি. এম,এম আহমদ ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বলেছেন, পাকিস্তানের মাত্র তিন-চার মাসের খাদ্যশস্য মজুদ আছে। সেখানে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের দমন করতে গিয়ে পাক-সেনারা বাংলাদেশের শতকরা ৫০ ভাগ রেলপথ ধ্বংস করে দিয়েছে এবং বর্তমান শতকরা ৮০ ভাগ রেলপথই অকেজো। ফলে বাংলাদেশে সরবরাহ ব্যবস্থা বিলকুল বন্ধ- মানে প্রায় তিনমাস ধরে বন্ধ। তাছাড়া প্রায় তিনমাস ধরে চট্টগ্রাম ও চালন বন্দর সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। বাংলাদেশের কল-কারখানা বন্ধ-ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় নেমে এসেছে রীতিমতো আকাল। অপরপক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানে উৎপাদিত কোনো জিনিসপত্র গত তিনমাস ধরে বাংলাদেশে আমদানী কলা সম্ভব হয়নি। অথচ এই বাংলাদেশেই গত ২৩ বৎসর ধরে পশ্চিমা ব্যবসায়ীদের কাজ-কারবারের বাজার ছিল। যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার এই অচলাবস্থার দরুন বাংলাদেশে থেকে যেমন চা, পাট, পান, সুপারি পশ্চিম পাকিস্তানের নেয়া সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকেও কোন মালামাল এখান আমদানী করা সম্ভবপর হয়নি। এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের উৎপাদনকারীরা অতুলনীয় ব্যবসায়ীক সংকটে পড়েছেন। এদিকে বাংলাদেশে পাক-সেনারা জানমালের যে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে এবং এখনো করছে তার দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে বিরল। এ অবস্থায় পাকিস্তানকে বিভক্ত করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ ইয়াহিয়া খানকে দায়ী করেছেন। ১৪ বৎসর ধরে পাকিস্তানে সামরিক শাসন কায়েম থাকায় এবং এবার জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে বরং বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা, নারী-নির্যাতন ও লুটতরাজসহ যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মতো লাভজনক বাজার হারাতে বসায় পঃ পাকিস্তানের সর্বত্র খান-সরকারের অপরিণামদর্শিতার বিরুদ্ধে দারুণ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে থেকে ইয়াহিয়াশাহী অবিলম্বে সেনাবাহিনী গুটিয়ে না নিলে আর্থিক ও জানমালের ক্ষতি যে কি পর্যায়ে পৌছে তা বলা দুষ্কর- তাই জঙ্গীশাহীর অর্থর-বিশেষজ্ঞরা আজ আতঙ্কিত হয়ে কি ভাবছেন না যে, ছেড়ে দে মা কেদে বাঁচি? (আবুল কাসেম সন্দ্বীপ রচিত)