পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

198 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড শোষকশ্রেণীর শোষকের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষের সংগ্রামের ইতিহাস। এই ইতিহাস গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের মানুষের রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৫০ সালে রাজশাহী জেলে বাংলার বীর সন্তানেরা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রাণ দিয়েছে, ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে বাংলার মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে তাজা তাজা প্রাণগুলো উৎসর্গ করেছে। ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন কোটি বাঙালীর প্রাণের দাবি দফ-দফাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে ভাই মনু মিয়া এবং আরো অনেকে। ১৯৬৯ সালে বাংলার স্বাধিকারের দাবিতে, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার দাবিতে, বাঙালীর প্রাণাপেক্ষা প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে বুকের তাজা রক্তে বাংলার শ্যামল মাটি লালে লাল করে দিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানী শোষকশ্রেণী, আমলাতন্ত্র, সামরিকচক্র এই তিনশক্তির বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে বার বার হামলা করেছে। প্রতিবারই বাংলার সংগ্রামী জনতার প্রতিরোধের সম্মুখে পিছু হটে গিয়েছে। এবং চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছে। তারপর তারা তাদের চূড়ান্ত আক্রমণ পরিচালনা করলো ২৫ মার্চের মুক্তিকামী জনতার কণ্ঠকে। কিন্তু বাংলার মুক্তিকামী জনতার দুর্জয় প্রতিরোধের সম্মুখে আবার পিছু হটে চলেছে পশ্চিম পাকিস্তানী বর্বর শোষকশ্রেণী এবং তাদের স্বার্থবাহী সামরিক চক্র। তাদের এই অভিজ্ঞান হয়েছে যে, পরাজয় তাদের সুনিশ্চিত-মৃত্যুর ঘন্টা বেজেছে। বাংলায় আজ রক্তের স্রোত বইছে। ঘরে-ঘরে, মাঠে মাঠে, রাজপথে জমাট-বাঁধা রক্ত। ধর্ষিতা মাবোনদের মরণ আর্তনাদ অভিশপ্ত ১৯৪৭ সনের ১৪ই আগষ্ট আর তার নায়কদের প্রতিমুহুর্তে ঘৃণার সাথে ধিক্কারে ধিকৃত করছে। ’৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট বাংলার জন্য এনেছে প্রতিশ্রুতির আড়ালে বঞ্চনা, শোষণ আর রক্তস্নান; কান্না আর দীর্ঘশ্বাস। তাই আজ ১৪ই আগষ্টে স্বাধীন বাংলার পবিত্র মাটিতে দাঁড়িয়ে শিকল-ছেড়া বাংলার মানুষ অতীতের অপমান আর গ্লানিভরা দিনগুলোকে স্মরণ করছে প্রচণ্ড ঘৃণার সাথে। আর সেজন্যেই সেদিন ছোট ছেলেটি বললো- মা, কি পুণ্যই যে ছিল তোমার, যার জন্যে ১৯৪৭-এর আগষ্টের কলঙ্কিত দিনটির মুখ দেখেতে পাইনি, আর তোমাদের মত আমার দুহাত দিয়ে এমন দিনটির জন্যে মালা গাঁথতে হয়নি। (জেবুন্নাহার আইভি রচিত) বাংলাদেশ গেরিলা ২৯ আগষ্ট, ১৯৭১ ‘গেরিলা’ শব্দটি এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে উচ্চারিত। এ শব্দটা শুনলেই মানসপটে ভেসে উঠে একটা ছবি-রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি চলেছে এক যুবক, কখন ঝড়ের রাতে তার সর্বাঙ্গে ঝরে পড়ছে বাংলা মায়ের আনন্দাশ্র বৃষ্টিধারায়, কখন স্রষ্টার বরাভয়ের মত ঝরে পড়ছে তালনবমীর আধো আধো জোছনা। পরনে কেন নির্দিষ্ট যুদ্ধসাজ নেই। কখন লুঙ্গী, কখন পাজামা, উর্ধ্বাংগে কখন শার্ট কখন ফতুয়া। সে চলেছে শত্রপক্ষের