পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

213 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড একদিন আনু ফিরলো বিকেলে। মুখখানা থমথম করছে। মাকে ডেকে বললো, “শুনছ মা, রিজিয়াকে মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গেছে।” রিজিয়া মেয়েটির সাথেই তা বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আনুর মা ভাবী আফসোস করেছিল সংবাদটি শুনে কিন্তু তার জন্যে আরও কিছু অপেক্ষা করছিল। আনুই বললো, “মা, আমি মুক্তিবাহিনীতে যাবো। রিজিয়াকে উদ্ধার করবো।” আনু মুক্তিবাহিনীতে যাবে শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন আনুর মা ভাবী। বোকার মত জিজ্ঞেস করলেন, “রিজিয়াকে উদ্ধার কইরা কি কইরবি?” “বিয়ে করবো, তার দোষ কি মা? আমারই সাথে তার বিয়ের কথা ঠিক হয়েছিল। আমারই তাকে রক্ষা করা উচিত ছিল। আমি পারিনি। আমারই দোষ ও যদি বেঁচে থাকে আর ওকে যদি উদ্ধার করতে পারি তবে আমি ওকেই ঘরের বউ করে আনব।” আনু লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে বলে ফেলে কথাটি। আনুর মা ভাবী আনুর কথার জবাব দিতে পারেন নি। ঠিকই তো। রিজিয়ার দোষ কি? আজ যদি তার দুই মেয়ের এই অবস্থা হতো? ছেলের কথায় রাগ হয় না। তার - গর্বই হয়। এর কয়েকদিন পরে আনু মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। এখন সে আছে পূর্ব রণাঙ্গনে। তারই কুশল জিজ্ঞাসা করলাম ভাবীকে। “তার লাইগ্যাই ফিরা আইলাম। এইহানে আইবার আগে একখানা চিডি আইছে। তোমর কাছে পইড়া শুনুম বইলা লইয়া আইছি। তোমাগো কথা শুইনতে শুইনতে ভুইলা গেছলাম। মনে হইতে ফিরা আইছি।” আনুর মা ভাবী তার জামার বুকের ভিতর থেকে একখানা খাম বের করলেন। আটদিন আগেকার লেখা চিঠি। আনু লিখিছেঃ মা, কয়েকদিন তোমাকে কোন খবর দিতে পারিনি। কারণ আমাদের দুটো লড়াই লড়তে হচ্ছে। মা, তোমার দুটো ঘাঁটি দখল করেছি। দুটো লড়াইয়ে আমরা ৮১ জন পাকসেনাকে মেরেছি। তোমর দোয়ায় আমাদের কারো গায়ে আঁচড়টিও লাগেনি। জান মা, লড়াইতে যাওয়ার আগে আমি কিছুক্ষণের জন্য চোখ বুজে তোমার মুখটা স্মরণ করতাম,আর আমার দেহে শক্তির বান ডাকতো। কেন এমন হয় মা? আমার মনে হয় মায়েরাই সকল শক্তির উৎস। তাইতো আমরা দেশকে মা বলি ডাকি, বলি দেশমাতা। আর একটি খবর বলি মা, একটা ঘাঁটি থেকে আমরা ১৩ জন মেয়েকে উদ্ধার করেছি। বর্বর দসু্যরা ওদের উলঙ্গ করে আটকে রেখে ওদের ওপর বর্বর পাশবিক অত্যাচার করতো। সবগুলো মেয়েই রেজিয়ার বয়সী। উদ্ধার করার পর কি কান্না ওদের। দুইজন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। আমিই ওদের বাঁচিয়েছি। জানো মা, ও দুজনের কাছে রিজিয়ার গল্প বলেছি, বলেছি- রিজিয়াকে উদ্ধার করতে পারলে আমি ওকে বিয়ে করবো,সম্মান দেবো। ওরা তাতে কিছুটা সান্তনা পেয়েছে। আমাকে ওরা ভাই ডাকে। ওরাও মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। আমাদের হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবাশ্রষা করে। মা, আমার দেশকে যাঁরা ধ্বংস করেছে তাদেরে ধ্বংস করবো। আমরা পশুদের সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেবো। তুমি দোয়া করো মা। আমরা জিতবো, তারপর একদিন তোমার কোলে মাথা রেখে খুউব করে ঘুমাবো।