পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

221 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড হলো দেশের সর্বত্র অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা প্রসারিত করে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপন করা। ইতিমধ্যেই সরকার দেশের অগ্রগতির প্রতিবন্ধক সম্প্রদায়িক দলগুলিকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন, বাংলাদেশে আর কোন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থাকবে না। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাম্পে দেশ আর কলুষিত হতে পারবে না। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা যুবকদেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তাদের ভূমিকা সর্বগ্রগণ্য। পশ্চিম পাকিস্তানী রক্তলোভী হার্মাদরা বাংলাদেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। বিজ্ঞানী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, অধ্যাপক, রাজনৈতিক কর্মী, সাহিত্যিক প্রভৃতি বাঙালী বুদ্ধিজীবীরাই দেশের পুনর্গঠনে অধিকতর সহায়ক হবে জানতে পেরেই ইয়াহিয়ার লুটেরারা বেছে বেছে এদের হত্যা করে। কাজেই নানা দিক দিযে সরকারের অসুবিধা হবে। অবশ্য যতই বাধা থাকুক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন চরম আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আবার দেশ গঠনেও আত্মনিয়োগ করতে পারবে। সাংগ্রামের মধ্য দিয়ে শোণিতমূল্যে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি- এই স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্যে এবং দেশের আর্থিক পুনর্গঠনের জন্যেও আমরা তেমনি প্রাণ পণ করব। এ ব্যাপারেও আমরা বিশ্বে নতুন বিস্ময় সৃষ্টি করতে সক্ষম হব। (নাসিম চৌধুরী রচিত) বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির উপায়

  1. * * * * * * * * ডিসেম্বর, ১৯৭১

যুদ্ধ একদিন শেষ হয়। ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে গড়ে তুলতে হয় নতুন জীবন,সভ্যতা। মানুষ যুদ্ধ চায় না। চায় শান্তি। তবু যুদ্ধ চলে আসছে মানব অস্তিত্বের আদিকাল থেকে। আমরা যুদ্ধ চাইনি। তবু যুদ্ধ চেপে বসেছিল আমাদের উপর ন্য মাস ২২ দিন পরে বাংলাদেশের পাক দখলদার বাহিনী সর্বত্র আত্মসমর্পণ করেছে। এখন আমাদের ভাববার পালা যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন নিয়ে। এখন আমাদের লক্ষ্য হবে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে দেশ গড়বার কাজে আত্মনিয়োগ করা। সাধারণ মানুষের জীবন থেকে দুঃখ-দারিদ্রকে দূর করে, সমগ্র দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম জনবহুল দেশ। এখানে গড়পড়তায় প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যার হার ৯০০ জনের উপরে। জমির উপর জনসংখ্যার চাপ এখানে খুব বেশী। আমাদের প্রধান এবং প্রাথমিক সমস্যা এই বিরাট জনসংখ্যার মুখে অন্ন যোগান। বাংলাদেশের মোট আয়তন ৩৫.৩ মিলিয়ন একর। এর মধ্যে আবাদী জমির পরিমাণ হল ২২.৫ মিলিয়ন একর। এর মধ্যে বৎসরে একাধিকবার আবাদ করা হয় এমন জমির পরিমাণ হল ৩ মিলিয়ন একর। তাই বলতে হয় মোট ফসল উৎপাদন জমির পরিমাণ হল ৩৮.৮ মিলিয়ন একর। একটা দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় দু’ভাবেঃ (১) নতুন জমিকে কর্ষণ উপযোগী করে; এবং (২) আবাদী জমিতে ফসলের উৎপাদন মাত্রা বাড়িয়ে।