পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

225 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড জোরে এই ভাগাড়েই কামড়াকামড়ি করেছে একে অন্যে। এই চব্বিশ বছরের নৃশংস ভাগাড়কে, শকুনের উচ্ছিষ্ট এই হাড়গোড়ের পাহাড়কে অপসারণ করে যদি সজীব করতে পারি তাহলে হবে আমাদের সত্যিকারের মুক্তি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- “জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক।” নজরুল বলেছেন, “সজীব করিব মহাশ্মশান”। এই শপথই আমাদের সত্যিকারের মুক্তির শপথ। আমাদের অনেক ক্ষত-জাতায় দেহ আজ ক্ষত ত। এই মুক্তির প্রভাতে আমরা হয়তো মনের ক্ষতই উপল ব্ধি কর छ्रे כיו:|כי | আমাদের এখনই ফিরে যেতে হবে ১৯৫২-র সেই ভাষা আন্দোলনে, আমাদের এখনই ফিরে যেতে হবে ১৯৪৮-এর মোহাম্মদ আলী জিন্না সেই সমাবর্তন বক্তৃতায়, সে বক্তৃতায় জিন্না বলেছিলেন,- “পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুই হবে।” আমাদের মনে রাখতে হবে ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বরকত, সালামের মায়ের কথা- আজকের খসরু ড্রাইভারের মায়ের মতই। এ স্বাধীনতাকে তাদেরও ভাগ আছে সমান সমান। স্বাধীনতার প্রত্যেকটি শহীদকে আমাদের জানতে হবে। এ যুগের দধীচির মতই। এবং সেখান থেকে শুরু করতে হবে এই নতুন জাতির পুনর্গঠন। শত্ররা আমাদের অর্থনীতিকে যেনম তছনছ করেছে তেমন তছনছ করেছে সংস্কৃতি ও জাতীয় সম্রমকে। একটা জাতির বিকাশে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা যেমন বাধ্যস্বরূপ, তেমনই সমান প্রতিবন্ধক হল সাংস্কৃতিক সংকট। আমাদের সামনে এখন দুটোরই সংকট অতিমাত্রায়। জাতির অর্থভাণ্ডার আজু মুক্তির উষালগ্নে যেমনই শূন্য, সংস্কৃতিও একইভাবে শূন্য। শত্ররা জাতীয় তহবিলের অর্থের মতোই শেষবেলায় রাইফেল দিয়ে লুটিয়ে দিয়ে গেছে আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিজীবী তথা শিল্পী গোষ্ঠীকে। সব খুইয়ে মুক্তি পেয়েছি বলে আমাদের হতাশায় ভেঙ্গে পড়া ভুল- শূন্যতা আমাদেরই পূর্ণ করতে হবে। মোড়লী করেছে এতকাল। আমাদের মাটিতে ফসল ফলে- আমাদের ভেতর থেকেই এসছিলেন জাতীয় সংস্কৃতিক বা বুদ্ধিজীবীরা। সুরের ইন্দ্রজাল বা মধুকণ্ঠ আমাদেরই ঘরের ফসল। তাই শূন্য দেখে ভেঙ্গে যাওয়া মানেই পূর্ণতার পথে কাটা দেওয়া। শত্রর শিবিরে নির্যাতিতা বোনদের দেখে আমাদের শিউরে ওঠার প্রয়োজন নেই। তাদের সামনে আমরা মুখ তুলেই দাঁড়াবো। আমাদের ছেলেরাই দেবে তাদের এই চরম ত্যাগের বখশীস। তাদের ত্যাগের মর্যাদা দিতে যদি আমরা না পারি তাহলে অসংখ্য-শহীদকেও আমরা অপমানিত করবো- কারণ শহীদের আত্মার সঙ্গে এই নির্যাতিত আত্মার যোগ খুবই নিবিড়। আমরা জীবন দিয়েই নতুন জীবন লাভ করেছি। ত্যাগের মধ্যে দিয়ে এসেছে আমাদের এই মুক্তির প্রভাত, তাই সেই ত্যাগ দিয়েই এই মুক্তিকে আমাদের বরণ করতে হবে- ভোগ দিয়ে শুরু করে নয়। আমরাই প্রমাণ করেছি- ভোগের জগৎ মিথ্যা এবং মিথ্যা বলেই আজ চব্বিশ বছর পরে ভোগের চিরনিবৃত্তি হোল। আজ নতুন দিনের এই প্রভাতবেলায় আমাদের আরো ত্যাগের জন্য শপথ নিতে হবে। কারণ, কোন মতেই আবার যেন আমাদের এই মুক্ত আকাশ কালো মেঘে না ঢেকে যায়, কোনোমতেই যেন আজকের এই মুক্ত বাতাস আবার বিষিয়ে না যায়।