পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

237 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড থাকার জন্য, আমাদের অস্তিত্বের জন্যে। হানাদার আক্রমণকারীর অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী, তার যুদ্ধ সাময়িক, কিন্তু আমরা যারা বাঁচার জন্য যুদ্ধ করছি- এ যুদ্ধের শেষ নেই। (মহাদেব সাহা রচিত) রেনেসাঁর সূচনাঃ বাংলাদেশ ৪ নভেম্বর, ১৯৭১ রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণ কথাটা আজ নানা সূত্রে- বিশেষ করে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজ প্রগতি উপলক্ষে বারংবার উচ্চারিত। রেনেসাঁর দৃষ্টান্তস্বরূপ আমাদের সামনে রয়েছে বহু আলোচিত ইওরোপীয় রেনেসাঁ এবং উনিশ শতকে বাংলার রেনেসাঁধর্মী নবজাগরণ। বর্তমানে বাংলায় যে মুক্তি আন্দোলন বাঙালী চাই। এই জাগরণ বা অভু্যত্থানকেই রেনেসাঁ না বলে রেনেসাঁর লক্ষণ বলতে চাই এই কারণে যে, রেনেসাঁ মুখ্যতঃ গঠনধর্মী, আর এখন আমরা একটি অচলায়তন ভাঙ্গার কার্যে ব্ৰতী- ভাঙ্গার পরে গড়বার পালাস্বভাবতঃই সে দায়িত্বও হবে দুরূহ এবং তাতে প্রয়োজন হবে মুক্তিযুদ্ধের মতোই চরিত্র ও সংকল্পের প্রতি একনিষ্ঠতা। বর্তমান সংগ্রামে যে দুর্জয় শক্তি ও মানসিক বলের পরিচয় বাঙালী দেখিয়েছে- তা মুক্ত নবজীবনকে অঙ্গীকার করার প্রবল বাসনা থেকেই জাগ্রত। বাঙালীচিত্তের এই নবজীবন প্রয়োগের পশ্চাতে যেসব অনুপ্রেরণা কার্যকরী সেসবের লক্ষণ বিশ্লেষণ করলেই আমরা বুঝতে পারব রেনেসাঁর সূচনা কত স্বাভাবিক এবং অবশ্যম্ভাবী। স্বাধীনতা নিজেই একটি জাতির জীবনে অনুপ্রেরণাস্বরূপ হতে পারে এবং তার নবজাগরণ সূচিত করতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা সে আশাকে সফল হতে দেয়নি। বৃহত্তম জনসমষ্টির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনকে পঙ্গু করার চক্রান্তের মধ্য দিয়ে তার জাগরণ সম্ভাবনাকে-সুপরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করার ঘৃণ্য অপচেষ্টায় মেতে ওঠে সাম্রাজ্যবাদী পাঞ্জাবী চক্রান্ত। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই এর ফল হয়েছে বিপরীত। জলস্রোত যেমন আপন গতিপ্রবাহেই সব বাধাকে অতিক্রম করে সম্মুখগামী- তেমনি বাঙালীর নবজীবন তৃষ্ণাও কোন ষড়যন্ত্র বা বাধাকে গ্রাহ্য করেনি বরং বিরুদ্ধতা তার শক্তিকে সংহত করেছে। রেনেসাঁর বিশেষত্বগুলিকে সংক্ষেপে এভাবে প্রকাশ করা যায়। যেমনঃ ১। জাতির অতীত ঐতিহ্য থেকে রস আহরণ এবং তার পুনর্মুল্যায়ন। ২। সংস্কারমুক্ত উদার জীবনবোধ। ৩। অপরিময়ে জীবনতৃষ্ণা। সঞ্জীবনী সুধা। পাকিস্তানী শাসকচক্র প্রথমেই আঘাত হানে বাঙালীর যুগ যুগ সঞ্চিত ঐতিহ্য সম্পদের ওপর। হিন্দু-মুসলমানের মিলিত সৃষ্টি হাজার বছরের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি ও লোকশ্রুতিকে হিন্দুয়ানীর গোড়া অজুহাতে বাতিল করে দেওয়া হয়। বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করা হয়, নজরুলের