পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

244 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড বাঙালীর হৃদয় প্রতিহিংসায়, ঘৃণায় ও ধিক্কারে সংকুচিত হয়ে ওঠে। কবিগুরুর ভাষায়- আল্লাহকে বারবার প্রশ্ন যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ুনিভাইছে তব আলো; তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, বেসেছ তাদের ভালো? প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করেঃ শেখ মুজিব কি অন্যায় করেছেন, যার জন্য আজ এই নিদারুণ শাস্তি তাঁর ভাগ্যে নেমে এলো? বাংলাদেশকে ভালোবাসা, বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ মোচনের জন্য শপথ গ্রহণ করাই কি শেখ মুজিবের একটি অন্যায় কর্ম? আর তারই জন্য কি এই মহান নেতার ভাগ্যে এমন বিপর্যয়? (ডক্টর মাযহারুল ইসলাম রচিত) দেশ গঠনে নারীর ভূমিকা ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ আজ দেশের প্রায় সকল এলাকাই শত্রমুক্ত। এই স্বর্গাদপি গরীয়সী জন্মভূমি, যাকে ভালোবাসার অপরাধে বুলেট, বেয়নেট, মর্টার, মেশিনগানে, লক্ষ লক্ষ প্রাণের অবসান ঘটেছিল। হারিয়েছিল কতজন স্বামী, সন্তান পিতা-ভ্রাতা। আত্মীয়পরিজন ভরা সুখের সংসার সর্বস্বহারা। চোখের জলে বুক ভাসিয়ে কতজন বাহির হয়েছিল পথে- সাতপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে। আজ শত্রমুক্ত অঞ্চলে ফিরে আসছে সবাই- কিন্তু বসতি গড়ে তুলবে এ কোন মাতৃভূমির কোলে চির সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা যার প্রতিরূপ এক পশুশক্তির দাহনে জনশূন্য, শস্যশূন্য, গৃহশূন্য দগ্ধ হাহাকারের এক চরম অভিশাপে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। বর্বর ইয়াহিয়ার অনুচরবর্গের অঞ্চল ত্যাগের প্রাক্কালে অনুষ্ঠিত হত্যাযজ্ঞের অবশিষ্টরূপে রয়েছে দগ্ধ গৃহ, লুষ্ঠিত দ্রব্যের ভগ্নাংশ, স্বজনসম্পত্তি হারা, শোকার্ত, বুভুক্ষু ও পঙ্গু কুকুর আর শকুনের লড়াই। শূন্য ভিটায়, ভগ্নগৃহে কারো বুকে জুলছে পিতা-মাতা, ভ্রাতা আর বন্ধু বিয়োগের বেদনা- স্বামী-সন্তান আর সুখের সংসার হারিয়ে কেউ বা কাঁদছে ভূলুষ্ঠিত হয়ে, কারো বা বেদনা ভাষাহীন। বিয়োগের বেদনা, সন্তান আর সম্পদ হারানোর শোক অস্বাভাবিক বা অযৌক্তিকও নয়- আর এ শোকে সান্তুনার ভাষাও নেই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিও প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে এই নিস্ফল শোকও পরিহার করতে হবে। অত্যাচারীর কবলমুক্ত পুনজীবিত আমরা। আমাদের এই নবজন্ম ও জীবন পরিচালনার সন্ধিক্ষণে পশ্চাতের শোক, দুঃখ, অনুশোচনাকে দূরে সরিয়ে একতা, শান্তি ও শৃঙ্খলাবদ্ধ সমাজ সংগঠনে সক্রিয় হয়ে নতুন উদ্যমে বাঁচতে ও বাঁচাতে হবে। এই ভগ্নহাটের দগ্ধভূমিতে এই শোকার্ত, নির্যাতিত পদুদের মাঝেই আমাদের কর্মক্ষেত্র বিছাতে হবে। আত্মনিয়োগ করতে হবে বিপন্ন, বিপর্যস্ত, নিরন্ন এই জনসমাজের কল্যাণমূলক সংগঠনের দায়িত্বে। দীর্ঘ সংস্কারের অভাবে মুক্তাঞ্চলের স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থা নানাভাবে বিপর্যস্ত। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অব্যবস্থা ও ময়লা নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থার অভাবে মশামাছির বৃদ্ধি ইত্যাদিতে নানা রোগের প্রকোপ দেখা দিতে পারে।