পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

266 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড বিশ্বে জনমত সৃষ্টি ও রাজনৈতিক চাপের ক্ষেত্রে ইয়াহিয়া-চক্রের অবস্থা আরো খারাপ। ভারত ও সোভিয়েট ইউনিয়নের যুক্ত ইস্তাহারে এই প্রথমবারের মত ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দটি বাতিল করা হয়েছে এবং পূর্ব বাংলার মানুষের অনপহরণীয় অধিকার রক্ষার দৃঢ়সংকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সোভিয়েট ইউনিয়নের বিশ্ব শান্তি কমিটি, ট্রেড ইউনিয়ন, আফ্রো-এশীয় কমিটি, সাংবাদিক সমিতি একবাক্যে বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট জঙ্গীচক্রের বর্বরতার নিন্দা করেছেন এবং বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবিলম্বে মুক্তি দাবী করেছেন ‘প্রাভদা ও ইজভেস্তিয়া পত্রিকায় বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নারকীয় বর্বরতার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে। আরব রাজ্য কাতারের প্রধান শাসক বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের প্রধানত্রীর কাছে এক তারবার্তায় তাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরূপে উল্লেখ করে কার্যতঃ বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকার করে নিয়েছে। সিংহলের ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী পার্লামেন্ট সদস্য মিঃ গুণবর্ধন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তিদাবীতে সিংহলের পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে সই ংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে। এছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ককালে ভারত বাংলাদেশ সমস্যার যে রাজনৈতিক সমাধান দাবী করেছে, তার প্রতি সোভিয়েট ইউনিয়ন, ফ্রান্স, সুইডেন, ইকুয়েডর ও নরওয়ে জোরালো সমর্থন জানিয়েছে। উগাণ্ডা, জাম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, নেদারল্যান্ডস এবং চিলিও বাংলাদেশ সমস্যার দ্রুত সমাধান দাবী করেছে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রাক্তন অধিনায়ক এয়ার মার্শাল আসগর খান আবার মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, ঢাকায় নতুন মীরজাফর ডাঃ মালিক ওরফে মল্লিকের নেতৃত্বে যে অসামরিক সরকার বসানো হয়েছে, জনপ্রতিনিধিত্বের কোন যোগ্যতা তাদের নেই। কয়েকজন অখ্যাত ও অপরিচিত লোক নিয়ে এই তাঁবেদার সরকার গঠনর করা হয়েছে। করাচী, পেশোয়ার, তুরঘামের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার পড়েছে জঙ্গশাহী নিপাত যাক। লাহোরের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছে। ফলে ইয়াহিয়া-চক্র বেসামাল হয়ে পড়েছেন। চারদিকের অবস্থা দেখে আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস, এদের ভরাডুবির আর দেরী নেই। তাই সাহসে বুক বেঁধে আজ আমরা বলতে পারি পূর্ব দিগন্তে রক্ত সূর্য শিশু রোদের জন্ম দিচ্ছে আমরা মুক্তি সৈনিক, আমাদের জয় অনিবার্য, আমাদের হাতের মুঠোয় স্বাধীনতা ও মুক্তির পতাকা। (আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত) মুক্তিফৌজের ক্যাম্পে


অক্টোবর, ১৯৭১

সেদিন একটা মুক্তিফৌজ-এর ক্যাম্পে গিয়েছিলাম রিপোর্ট সংগ্রহের জন্যে। কিন্তু মনের মধ্যে আরো একটা ইচ্ছা সুপ্ত ছিল। সেটা হলো বাংলাদেশের সেই সমস্ত কিশোরদের দেখা, তাদের কথা শোনা, যাঁরা মাবাবা আত্মীয়-পরিজন সবার মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে, দেশের স্বাধীনতা রক্ষার দুর্বার শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন শত্রর ওপর। সত্যি বলতে কি এটা আমাকে নেশার মত পেয়ে বসেছিল। তাই যখন রিপোর্ট সংগ্রহের ছুতো করে সেই সুযোগটা অকস্মাৎ এসে গেল তখন আর এক মুহুর্ত দেরী না করে ক্যাম্পে যাবার আয়োজন আরম্ভ করলাম।