পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

270 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড পশ্চিম পাকিস্তানীরা ক্ষতবিক্ষত- ২৫শে মার্চের হামলার কী প্রয়োজন ছিল? বেলুচ-পাঠান-সিন্ধীরা গালে হাত দিয়ে ভাবছে বাংলার মানুষের কী দোষ? তারা চেয়েছিল স্বাধিকার। তারা চেয়েছিল দেশের বেশিরভাগ লোকের মঙ্গল। সে মঙ্গলের আলো ছড়াতো সুদূর পশ্চিম পাকিস্তানের নির্যাতিত সিন্ধী-পাঠান-বেলুচদের ঘরে ঘরে। একদিন বেলুচরা মাথা নোয়ায়নি বলে তাদের জীবনেও নেমেছিল টিক্কা খানের পাশর অত্যাচার। ৪৮ সালে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে ঈদের জামাতে পাক-বাহিনী ফেলেছে বোমা। মুক্তিবাহিনীর সাফল্যই ঘরে-বাইরে পাকহানাদারদের জন্য মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে এসেছে। দুর্জয় বাংলার দুর্জয় প্রাণের জয় অবশ্যম্ভাবী। (বদরুল হাসান রচিত) মুক্তাঞ্চল ঘুরে এলাম ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এই মুহুর্তে একটি উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের মধ্যে প্রবেশ করেছে। প্রতি প্রহরে মুক্তিযোদ্ধা ভায়েরা নতুন নতুন এলাকায় তাদের বিজয় ধ্বনিত করে তুলছে। তাদের বিজয়দৃপ্ত পদচারণা মানুষের মুক্তি এবং মানবিকতার শাশ্বত বাণীকে চিরন্তন এবং মহিমান্বিত করে তুলছে। শত্ররা হটছে, পিছু হটছে, মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে চলেছে, সামনে চলেছে। মানবিকতার শক্রপাক-হানাদাররা মৃত্যুমুখী যাত্রাপথের শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে, বাঙালীরা মহিমাময় মুক্তিতোরণের দ্বারে এসে গেছে। মুক্তিযোদ্ধা ভায়েরা পায়ে পায়ে চলেছে, সামনে চলেছে, চলেছে মুক্তির মহাসঙ্গীত উৎসে। পাক হানাদাররা পায়ে পায়ে মরছে, আরো মরছে, মরছে ঘৃণা এবং গ্লানির অন্ধকারে। ওদের মৃত্যু সহজ, সম্ভব- তাই সত্য। আমাদের অমরত্ব ন্যায়ত্ব, সত্যত্ব তাই অবধারিত। ওরা লাঞ্ছিত সমগ্র মানুষের বিবেকের বিচারে। আমরা নন্দিত সমগ্র সভ্যতার সান্নিধ্যে। সভ্যতার বিনাশে ওদের পাশবিক তৃপ্তি। সেই সভ্যতার স্থায়িত্ব আমাদের একমাত্র মুক্তি। সভ্যতার বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস যে যুদ্ধ বাংলাদেশের সীমানায় বন্দী ছিল, হানাদার হায়েনারা সে যুদ্ধকে ছড়িয়ে দিয়েছে আরো বৃহত্তর পৃথিবীতে। পাকিস্তানীরা সমগ্র মানুষের রক্তে স্নাত হতে চাইছে। চাইছে পৃথিবী জুড়ে তাদের বর্বর মৃত্যু, হত্যাযজ্ঞ নির্বিচারে শুরু করতে। এদের থামতে হবে। এদের থামাতে হবে। এদের অস্তিতুকে ধ্বংস করতে হবে। এদের বিনাশ করতে হবে। মানব সভ্যতাকে রক্ষা করতে হবে। মানুষকে বাঁচাতে হবে। আজ মানুষকে বাঁচাবার লড়াই। বিস্তারিত মুক্তাঞ্চলে অন্ততঃ তারই বিরামহীন প্রচেষ্টা চলেছে। ওরা তোলার শ্রমে জড় হচ্ছেন। ইতিমধ্যে বাংলার বহু অঞ্চল মুক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু সেগুলোর অনেক স্থানই এখন জুলছে। পশ্চিমারা পিছু হটার প্রাক্কালে অনুসরণ করছে পোড়ামাটি নীতি। জুলিয়ে দিয়েছে গ্রামের পর গ্রাম, বসতির পর বসতি। খুলনার দক্ষিণাঞ্চল ঘুরে দেখে এলাম। কয়েকদিন আগে এই অঞ্চলে পাক-হানাদারদের সাথে প্রচণ্ডভাবে লাড়াইয়ে আমাদের মুক্তিবাহিনী খুলনার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রায় ৬০০ বর্গমাইল এলাকা মুক্ত করেছেন। এই এলাকা সম্পর্কে কথা হচ্ছিল শাজাহান মাস্টারের সাথে। তিনি দেবহাটা থানার টাউন শ্রীপুর হাই-স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন। আজ তিনি কলম ছেড়ে ষ্টেনগান হাতে নিয়েছেন। শিক্ষকের চেয়ার ছেড়ে সৈনিকের বাঙ্কারে বসেছেন।