পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

274 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড হয় তিনি আমাদের সাথেই আছেন, নির্দেশ দিয়ে চলছেন সামনে এগিয়ে যাবার, জননী বাংলার শৃঙ্খল মোচন করার। তিনি যতই দূরে থাকুন আর যেখানেই থাকুন না কেন, আশীৰ্বাদই আমাদের প্রেরণা দিচ্ছে মৃত্যুভয়কে হরণ করে সামনে এগিয়ে যাবার। এমনি অনেক কথা বলতে বলতে আনোয়ার উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। হঠাৎ গুম গুম করে প্রচণ্ড দুটো শব্দ হল একেবারে কাছেই। আমাকে বিস্মিত করে ওর খাটের পাশে রাখা রাইফেলটা নিয়ে ও উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। কিন্তু পরক্ষণেই পায়ের যন্ত্রণায় কুকিয়ে উঠল। ততক্ষণে আমি ওকে ধরে ফেলেছি। আমি ধরতেই ও সম্বিত ফিরে পেল। আমাকে বলল, মনে ছিল না আমি আহত। ওই শব্দ শুনলে কিছুতেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। আবার ওকে শুইয়ে দিলাম। (তপন ভট্টাচার্য রচিত) রণাঙ্গন ঘুরে এলাম ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ বাংলার স্বাধীনতা এখন অবধারিত সাফল্যের পথে যাত্রা করেছে। প্রতিটি রণাঙ্গনে এখন পশ্চিমী হানাদার বাহিনী আমাদের মুক্তিবাহিনীর কাছে হন্দম মার খাচ্ছে এবং পিছু হটছে। অচিরেই তারা লক্ষ্য করবে কিছু হটার পরিণামে তারা বঙ্গোপসাগরের কলে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখান থেকে ফিরে আসার এবং ফিরে যাওয়ার দুটো রাস্তাই বন্ধ। শেষের সেদিন কি ভয়ংকর আর মাত্র কয়েক দিনেই তারা হাড়ে-মাংসে টের পাবে। ংলার মুক্তিযোদ্ধারা এখন এগিয়ে, শুধু এগিয়ে চলেছে। শত্রু এখন ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। খুলনা, বরিশাল, যশোর, দিনাজপুর, রংপুর, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম মুক্তিবাহিনীর কবজার মধ্যে প্রায় এসে গেছে। এসব অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা এ মুহুর্তে মুক্তিবাহিনীর দখলে এবং এসব এলাকার কয়েক কোটি মানুষ এখন স্বাধীন গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীনে শান্তিতে জীবনযাপন শুরু করেছে। প্রতিটি রণাঙ্গন এখন মুক্তিবাহিনীর উল্লাস-ধ্বনিতে মুখরিত- ‘জয় বাংলা’ নিনাদে প্রকম্পিত। খুলনা, বরিশাল এবং পটুয়াখালির যুদ্ধরত মুক্তিফৌজ ভাইদের সাথে আলাপ করে এবং এইসব রণাঙ্গন সফল করে আমার যেন বরাবর মনে হয়েছে- এ কি সেই বিধ্বস্ত বাংলা, না জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারীর ঢাকা? এই বছরের প্রথম দিকে সমগ্র ঢাকার আকাশ-বাতাস নগর বন্দর যে নামে যে ধ্বনিতে কেপে কেপে উঠতো- বরিশাল খুলনার রণাঙ্গনগুলোর জয়ধ্বনি তার সাথে কত আশ্চর্যভাবে একাত্মং যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরার রণাঙ্গনের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে যে ‘জয় বাংলা শেখ মুজিব জিন্দাবাদ ধ্বনি তা যেন বরিশাল-পটুয়াখালি রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থেকেও শোনা যায়। বাংলার সব রণাঙ্গনের রঙ আজ এক, সব রণাঙ্গনের ধ্বনি আজ এক, সব রণাঙ্গনের চিত্র আজ এক মুক্তিবাহিনী সর্বত্র জিতছে, শুধু জিতছে। রণাঙ্গন এবং সেই সাথে বাংলার প্রত্যন্ত পল্লী এলাকা শেখ মুজিব ও জয় বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত, নিনাদিত। সব রণাঙ্গনেই একই রবঃ যাত্রা করো- যাত্রা করো- এগিয়ে চলো- এগিয়ে চলো। বাগেরহাট রণাঙ্গনে এসে মনে হলো সেই