পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

286 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড মস্তকে দিল এবং তাঁহাকে বেগুনিয়া কাপড় পরাইল, ......তখন পীলাত আবার বাহিরে গেলেন ও লোকদিগকে কহিলেন, দেখ, আমি ইহাকে তোমাদের কাছে বাহিরে আনিলাম, যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমি ইহার কোনই দোষ পাইতেছি না। ...তখন যীশুকে দেখিয়াই প্রধান যাজকেরা ও পদাতিকেরা চেচাইয়া বলিল, উহাকে ক্রুশে দেও, উহাকে ক্ৰশে দেও। ...পীলাত তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের রাজাকে কি ক্ৰশে দিব? প্রধান যাজকেরা উত্তর করিল, কৈসর ছাড়া আমাদের অন্য রাজা নাই। তখন তিনি যীশুকে তাহাদের হস্তে সমর্পণ করিলেন, যেন তাঁহাকে ক্রুশে দেওয়া হয়।” একথা বললে ভুল হবে না যে, জগতে যীশুখ্রীষ্টের আবির্ভাব ছিল ঈশ্বর-নিরূপিত। যীশু জগতে এসেছিলেন মানুষকে তার পাপের অন্ধকার থেকে পুণ্যের আলোক-সরণীতে পৌঁছে দিতে। তিনি এসেছিলেন মানুষকে পাপ থেকে পরিত্রাণ দেবার জন্য- মুক্তির পথ দেখাবার জন্য। তিনি বলেছিলেন, মানুষকে আমিই পথ, সত্য ও জীবন- আমাতেই তোমরা পরিত্রাণ পাবে। বলেছিলেনঃ সৎ হও, পবিত্র জীবনযাপন কর; কারণ তোমাদের স্বৰ্গস্থ পিতা ঈশ্বর পবিত্র। আহবান জানিয়েছিলেন, “হে পরিশ্রান্ত ভারাক্রান্ত লোকসকল, আমার নিকটে এসো, আমি তোমাদের শান্তি দেব।’ তাঁর সমস্ত বক্তব্য ছিল মানুষের শুভবুদ্ধির কাছে। জীবনভর তিনি অশুভ শক্তির সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। তাই সামাজিক প্রভুত্বের ক্ষমতালোভী যাজক-পুরোহিত ও গোঁড়াদের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা প্রতিবাদ করেছেন। কারণ, এই সমস্ত ভণ্ড ধর্মগুরুরাই তখন মানুষকে এক মহাভ্রান্তির পথে ঠেলে দিয়েছিল নিজেদের বৈষয়িক স্বার্থে। এরাই নিজেদের কুটিল চক্রান্তে শাস্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা করে, ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে নিজেদেরকে মধ্যস্থ ব্যক্তিরূপে বসাতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে মানুষ তখনকার দিনে সরাসরি ঈশ্বরের চরণে নিজেকে সমর্পণ করতে পারতো না। আসতো ঐসব যাজকদের কাছে। কিন্তু খ্ৰীষ্ট এসে মানুষকে দেখালেন প্রকৃত সত্যকে। কারণ, পাপী মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অসীম সমমৰ্মিতা। মানুষকে ভালোবেসে তাই তিনি স্বর্গ ছেড়ে মাটিতে এসেছিলেন মানুষের অতি কাছে। এর ফলে পুরোহিত সম্প্রদায় ভিন্ন সকলের কাছে তিনি শুধু আপন হয়েই ওঠেননি- সকলের হৃদয়ে তাঁর জন্য পাতা হয়েছিল শ্রদ্ধার আসন। সকলেই তাঁর ধর্ম উপদেশ শুনতে ভালোবাসত। সকলেই তাঁকে প্রকৃত ধর্মগুরু হিসাবে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু পুরোহিত-তন্ত্র সেদিন এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তারা তখন সর্বদাই যীশুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। তাঁর দোষ ধরতে চেষ্টা করেছে, তাঁকে জনসমাজে-অপদস্থ করতে সচেষ্ট হয়েছে। কিন্তু সমস্ত চেষ্টা তাদের ব্যর্থ হয়ে গেল। তখন হিংসায় উন্মত্ত হয়ে তারা যীশুর প্রাণনাশের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলো। আজও যেমন সুবিধাবাদী, বিশ্বাসঘাতকের অভাব নেই, সেদিনও অভাব হয়নি। যীশুর বারোজন শিষ্যের একজন এসে যোদ দিল এই ষড়যন্ত্রে- শুধুমাত্র অর্থের প্রলোভনে। এই বিশ্বাসঘাতক শিষ্যের সাহায্যে চক্রান্তকারীরা লোকচক্ষুর আড়ালে রাতের অন্ধকারে গেৎশিমানী বাগান থেকে যীশুকে বন্দী করল। ভাবতে অবাক লাগে, যে মানুষ পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবার জন্য বিচারকের কাছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হল- এ ব্যক্তি ঈশ্বর-নিন্দুক, কারণ এ নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবী করে। আরও অভিযোগ করা হল, এ ব্যক্তি রাজদ্রোহী, কারণ এ নিজেকে যিহুদীদের ইব্রীয়দের রাজা বলে ঘোষণা করেছে। বলা বাহুল্য, সে সময় সমগ্র প্যালেস্টাইন দেশ রোম-সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। যাহোক, যীশুর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ আনা হয়েছিল তার জন্য পুরোহিত-তন্ত্র হাজির করেছিল বহু মিথ্যা সাক্ষীকে। রোম সম্রাটের প্রতিনিধি ছিলেন দেশাধ্যক্ষ পীলাত। তার সামনে চলল এক বিচারের প্রহসন। তিনিও বুঝলেন যাজকরা হিংসার বশে যীশুর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। বুঝলেন, ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে এনেছে রাজদ্রোহিতার