পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফতেঃ ফতেঃ 349 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড তাহলে ওইসব দেশদ্রোহীদের হাতে আমার সাধের সেনাদল এখনও মার খাচ্ছে। খাচ্ছে মানে? এ মার এমন মার যে হজম করা মুস্কিল। মেরে একে বারে তক্তা করে দিচ্ছে। আহা! দুর্মুখ খান, তোমার এই কথা শুনে আমার মাথাটা আবার ঘুরে উঠল। পানি। জনাব, আপনি বিচলিত হবেন না। আমাদের বীর সেনাবাহিনী জান দিয়েও দেশ রক্ষা করবে। দেশ রক্ষা নয়- বলুন তারা এখন পেট রক্ষায় ব্যস্ত। তার মানে? বেশ খোলাসা করে বলো দুর্মুখ খান। তার মানে বুঝলেন না জনাব? আপনার সেনাদল বাংলাদেশের বুকে অভিযান চালাবার নামে নিরীহ মানুষ গুলোকে হত্যা করেছে, তাদের যথাসর্বস্ব লুটতরাজ করেছে, ব্যাঙ্ক লুটেছে। এইসব লুটের টাকায় আপনার এক-একজন গরীব সেনা রাতারাতি ক্রোড়পতি বন গিয়া। এ তো আনন্দের বিষয়। খোশ খবর। কিন্তু নিরানন্দে আপনি তাদের ভাসালেন জনাব। আচমকা একশো আর পাঁচশো টাকার নোটগুলোকে কাগজ করে দিয়ে আপনার ওইসব ক্রোড়পতি সেনাদের আপনি একেবারে পথে বসালেন। তারা বলছে, কেল্লা ফতে খান আমাদের পথে বসালেন। সিপাহসালার, এ কথা কি সত্য? এই দেখো মাথাটা আবার আংশিক সত্য জনাব। লুটের টাকা নিয়ে সৈন্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে কিনা জানি না। তবে তারা পুরো মাইনে না পাওয়াতে মানে ডিফেন্স সারটিফিকেটে মাইনে দেওয়াতে দিলে বড়ই দুঃখ পেয়েছে। কি আর করা যাবে সিপাহসালার। যুদ্ধের ব্যয়, খয়রাতি সাহায্য বন্ধ, ব্যবসা অচল। এই সব মিলে কোষাগার প্রায় শূন্য। উঃ মাথাটা কেমন যেন ভাববেন না জনাব। আমাদের সেনারা মাইনে না পেলেও বীরবিক্রমে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। হ্যাঁ-হ্যাঁ, কুছ পরওয়া নাহি হ্যায়। পয়ষট্টি সালের যুদ্ধের সময় আমাদের স্বনামধন্য লালকানার যাবো। ভাগ্যিস সতেরো দিনে যুদ্ধ থেমেছিলো। তুমি পরিহাস করছো দুর্মুখ খান! এ পরিহাস নয় সিপাহসালার। বাস্তব আর মুখের বজঠাণ্ডা। বুলি এক নয়। এর মধ্যেই শোনা যাচ্ছে, আমাদের কিছু সেনা নাকি আর বাংলাদেশের নিরীহ মানুষ খুন করতে রাজী নয়। ওফ! মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল! বিচলিত হবেন না জনাব। এ নিতান্ত কিছু সেনার মুখের কথা- মনের কথা নয়।