পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নারায়ণ : নারায়ণ : . 376 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড তোমার ওপরে যে আদেশ এসেছে তা বুঝতে পেরেছ? হ্যাঁ, রহমান ভাই। তুমি প্রস্তুত? সম্পূর্ণ প্রস্তুত রহমান ভাই...হল্ট ও কামস দেয়ার? (কাঁপা গলায়) ফ্রেণ্ড। পাস ওয়ার্ড। পিলেট বুলেট মর্টার, বুলেট বুলেট মর্ডার (সঙ্গে সঙ্গে শান্তির হাতের ষ্টেনগান গর্জে ওঠে, একটি আর্ত চিৎকার। সবাই ছুটে এগিয়ে যায়।) কে লোকটি রহমান ভাই? রাজাকার দেখছি। পকেটে পাওয়া কাগজই তার সাক্ষী। গোয়েন্দাবাজি করতে এসেছিল। আহা, বেচারা গতকালকার পাসওয়ার্ড সম্বল করে এসেছিল দালালী করতে, ও হয়তো জানতো না সত্যের প্রহরীরা সদা জাগ্রত। তোমায় ধন্যবাদ শান্তি, তুমি সময়মতো ধরে ফেলেছিলে। যাক যা বলছিলাম। চরম মুহুর্ত এসে গেছে। এতদিন আমরা কেবল গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করেছি। সারা বাংলাদেশের রাস্তাঘাট অকেজো করে দিয়েছি, ব্রিজ উড়িয়েছি, রেললাইন ধ্বংস করেছি। এবং সুযোগ পেলেই শত্রকে আঘাত করেছি। আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এটা দেখিয়ে দেওয়া যে খালি হাতে শুরু করলেও আমরা তাদের কাপুরুষোচিত অতর্কিত আক্রমণে নিশ্চিহ্ন হবার পদার্থ নই, আমরা এক মরে বহু হই। আমরা শত্রর সমস্ত পথ বন্ধ করে দিয়েছি, সে ইচ্ছা করলেই সামনে-পিছনেডাইনে-বাঁয়ে তাড়াতাড়ি পালাতে পারবে না। সর্বত্র আমাদের ঘাঁটি, সবখানে আমাদের দুর্গ। হানাদাররা এখন যশোরে, রংপুরে, সিলেটে, কুমিল্লায়, ঢাকায়, চট্টগ্রামে আলাদা হয়ে আছে, বন্দী হয়ে আছে। কথায় কথায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তাদের আর যেতে হবে না; একখানে দাঁড়িয়েই তাদের দেখে যেতে হবে সত্য কিভাবে অসত্যের ওপর জয়লাভ করে। তাহলে এখন আমাদের কর্তব্য কি? এখানেই বসে থাকা। আর আধঘণ্টার মধ্যেই আমাদের মুক্তিবাহিনী এখান দিয়েই যাবে, এগিয়ে যাবে সামনে। সবুজ গ্রাম, অর্থাৎ হেডকোয়ার্টার থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছে এখান থেকেই সরাসরি মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিলিত হতে। এইবার আমরা চারদিক থেকে হানাদারদের আক্রমণ করবো। আমরা দেখিয়ে দেবো বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। সেই আর্তনাদ। আমি এখনও যেন শুনতে পাই খান-সেনাদের বুলেটে ঢলে পড়া আমার মায়ের সেই শেষ আদেশঃ খোকা তুই প্রতিশোধ নিবি, প্রতিশোধ নিবি তোর মায়ের, তোর দেশের (নেপথ্যে ঢাকার হাহাকার, মায়ের আর্তনাদ ও শেষ আদেশ দূর থেকে ভেসে আসবে)