পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

506 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ংখ্য স্ত্রীপ্ট পাওয়া যাবে না থেকে কোরানের উদ্ধৃতি কেটে দেয়া হয়েছে। বেতার কেন্দ্রের ডিউটি রুমের আলমারিতে রাখা হাদিসের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, এমন কি কোন কোন হাদিস সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ করা যেতে পারে-“আল্লাহতালা সে জাতির অবস্থা কখনই পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ পর্যন্ত সে নিজের অবস্থা নিজে পরিবর্তন না করে।” আল-কোরানের এই বিখ্যাত বাণীটি শত্রর দ্বারা পরিচালিত ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে আর শোনা যায় না। মোটের উপর মিথ্যার বারুদ পুড়িয়ে ঢাকা বেতার আতসবাজির খেলায় মেতে উঠেছে। সেখান থেকে এক ধরনের বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে- যাকে সহজ কথায় ছ্যাবলামো ছাড়া আর কিছুই বলা চলে না। ঢাকা বেতার একটা অনুষ্ঠানের নাম সোহাগ করে রেখেছে ’প্লেইন ট্রথ’। অনুষ্ঠানের বক্তব্যগুলো অনুধাবন করলে দেখা যাবে তারা কতগুলো জটিল মিথ্যের জাল বুনছেন অনুষ্ঠানটির নাম কমপ্লেক্স লাই দিলেই ভাল হত। তাই বলছিলাম- ঢাকা বেতার কেন্দ্র এখন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। সেখানে বিবেককে, সত্যকে, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের বক্তব্যকে বেয়নেটের পাশবিক আক্রমণে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে। এর চেয়ে জঘন্যতম কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প আর কি হতে পারে। (আশরাফুল আলম রচিত) মৃত্যুহীণ প্রাণ মাকে গল্প বলতে বললে মা গড়িমসি করতেন। পরে আমাদের আগ্রহ দেখে শুরু করতেন। এক দেশে ছিল এক রাজা। আর রাণী। তাঁর হাতীশালে হাতী, ঘোড়াশালে ঘোড়া। সেপাই লস্করে জনে মানুষে মম করে রাজপুরী, আমলায় পইলায়, উজিরে নাজিরে রাজদরবারের কী রবরবা! কিন্তু আজ গল্পের ধরন পাল্টে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিখিয়ে দিয়েছেন রাজা একটি নয়, সাড়ে সাত কোটি মানুষ প্রত্যেকেই এক একটি রাজা। আমরা সবাই রাজা। শুধু স্বাধীনতা বন্দী নয়, জালেমের কারাগারে ন্যায়বিচার মানবাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ২৪ বছর ধরে মাথা কুটে মরছে। বন্দী আমার বাংলা। আমার রূপসী বাংলা আমরা ধর্ষিতা বাংলা। আমার জননী বাংলা। রাজপুত্র একটি নয়। হাজার হাজার, লাখ লাখ রাজপুত্ৰ-মাতৃ অপমানের তীব্র প্রতিশোধ কামনায় ছায়াহীন, বৃক্ষহীন ধুধু তেপান্তরে ধূসর পথ অতিক্রম করে চলছে বন্দিনী মাকে উদ্ধার করতে। আমার মা রাজপুত্রের যে বর্ণনা দিতেন তার সঙ্গে এর কত তফাৎ সেই রাজপুত্রের পোশাকে জরীর কারুকাজ, সূর্য এসে চুমু দিলেই সাত রং খেলা করে তার দেহে রূপোর খাপে কারুকাজ করা তলোয়ার। মাথায় মণিমুক্তা খচিত উষ্ণীষ। গলায় গজমতি হার কানে কানপাশা। চন্দন চর্চিত কপালে জয়-তিলক। চরণে চটকদার বাহারী জুতো। ঘোড়াটাই বা কম কী দুধের মতো সাদা ধবধবে চোখ জুড়ানো ঘোড়া। তার উপর মখমলের জীন। আর আমার রাজপুত্র! পায়ে তার জুতো নেই। না বর্ষায়, না শীতে। পরনে একটি মাত্র লুঙ্গি। ভাগ্য প্রসন্ন হলে একটা গেঞ্জি, নইলে গামছাই সার। চন্দন চর্চিত অঙ্গ নয়, ক্রলিং করে করে সারা গায়ে মেখেছে বাংলার মাটি। তলোয়ার তো নেই। হাতে লাঠি, নয় বর্শা। রাজাকার বা হানাদারদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা থ্রি-নট-খ্রি। আমার রাজপুত্র বলে, না না ছিনিয়ে আনা নয়, ওটা তো রোজগার। রোজগারটা যদি এল-এম-জি হয়। ব্যাস আহার-নিদ্রা মাথায় উঠল, তেল দাও, সাফ কর, শোবার সময় বুকে জড়িয়ে ধরে শোও- স্বপ্নও ঐ এল-এম-জি নিয়ে না, রাজকন্যা-টন্যা নয়, এমন কি পরীটর কাছে ঘেষতে পারে না তার, সে স্বপ্ন দেখে বিশাল এক প্রান্তরে সে দাঁড়িয়ে আছে, এল-এম-জি একটানা গর্জন করে চলেছে, আর শত্রসেনারা, তাগড়া ছোট চাচা প্রবল ঝাঁকুনী দিলে কুলগাছের কুলগুলো যেমন ঝুপ ঝুপ করে শিশিরের উপর