পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

507 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড রাক্ষসগুলো ঝুপ ঝুপ করে পড়ছে তো পড়ছেই। এক সময় একটা বুলেট এসে তাকে থামিয়ে দেয়। সে দ্যাখে, তার প্রিয় পতাকা দিয়ে গোটা শরীর জড়িয়ে রাখা হয়েছে। আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে-আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। গান শুনতে শুনতেই তার ঘুম ভাঙে। আহা স্বপ্নটা যদি সত্য হয়! ধীরে ধীরে নতুন রাখা দীর্ঘ দাড়িতে হাত বুলায় সে। আচ্ছা, আমার এই রাজপুত্রের কাছে আমার মায়ের রাজপুত্ত্বরটাকে একটু পানসে পানসে মনে হয় না! ঐ রাজপুত্রটা যেন যাত্রা-থিয়েটারের। কেমন যেন ন্যাকা ন্যাকা। না? নিজের কোন বুদ্ধিসুদ্ধি নেই, কোন কাজ নিজের করার মুরোদ নেই, হয় ব্যঙ্গমা-ব্যঙ্গমী নয় পরটরী এসে করে দেয়। না হলেই চিত্তির। আমার মায়ের কিসসা শেষ হতো এভাবে-তারপর? তারপর আর কি, রাজপুত্র রাজকন্যাকে নিয়ে সুখেশান্তিতে বাস করতে লাগল। আর আমার রাজপুত্র? না। না, না এমন রাজপুত্র পৃথিবী কোনদিন দেখেনি, কোন কবি কল্পনা করতে পারে না এর রূপের পৃথিবীতে এর কথা কেউ কোনদিন বলে নি। বীর প্রসবিনী বাংলাদেশের গর্ভেই এমন রত্ন জন্মগ্রহণ করে। খালি হাতে যারা বীরের মতো লড়াই করতে পারে। যারা হাসতে হাসতে মারতে পারে, হাসতে হাসতে বীরের মতো মরতে জানে। আমার রাজপুত্র জানে মৃত্যু কত তুচ্ছ জানে, মানুষ মরে। মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। কেউ রোগে মরে, কেউ হাসপাতালে মরে, কিন্তু প্রাণ দিতে জানে না। আমার রাজপুত্র শুধু মারতেই নয়, প্রাণ দিতেও জানে। যে প্রাণ মানুষের কল্যাণের জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবাইকে মর্যাদা দেয়ার জন্য, দেশের জন্য নিবেদিত, তার জন্য মৃত্যুবরণ করার মতো সৌভাগ্য আর কিছুতেই নয়। সকল জীবনের গৌরবোজ্জ্বল দেশের জন্য প্রাণ দিতে জানা। এ প্রাণ মরে না, চিরকাল বেঁচে থাকে। মেয়েরা ঘাটে চাল ধুতে ধুতে তারই গল্প করে, পাল তুলে দিয়ে বৈঠায় ক্লান্ত হাত রেখে মাঝি তারই গান গায়, কবিরা আসরে। সাধ্য আছে কোন নুরুল আমীনের কোন নতুন অস্ত্র দিয়ে, বুলেট দিয়ে, স্যাবরজেট দিয়ে বা শ্যাকে ট্যাঙ্ক দিয়ে বাংলার বুক থেকে রফিক, জব্বার, বরকত, সালামকে হত্যা করতে পারে? না । কেন? আমার রাজপুত্র মৃত্যুহীন প্রাণ দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। কিসসার রাজপুত্র রাজা হয়, তারপর এক সময় মারাও যায়। এই রাজপুত্রের মৃত্যু নেই। এরা মৃত্যুহীন প্রাণ। (আসাদ চৌধুরী রচিত) ইবলিশের মুখোশ যখন ছোট ছিলাম, বয়স যখন পাঁচ কিংবা ছয়ের কোঠায় ছিল তখন দাদীমা গল্প শোনাতেন। ঝোলা বোঝাই গল্প ছিল দাদীমার। আজগুবি সব ভূতের গল্প। গল্প শুনতে শুনতে কখনো উত্তেজিত হয়ে উঠতাম, কখনো আবার প্রত্যক্ষ ভূত দেখার মতোই আৎকে উঠতাম। বুকের ভেতরটা দূর দূর কেপে উঠতো। কোন কোন দিন এত ভয় পেতাম যে ভয়ের প্রচণ্ডতায় দাদীমাকেই নিজের অজান্তে জড়িয়ে ধরতাম। এতো ভয় পেতাম তবু কিন্তু গল্প শোনার নেশা কাটত না। ভয় খেয়ে গেছি বলে দাদীমা একটু থেমে গেলেই ওকে তাড়া দিয়েছি আবার শুরু করবার জন্য।