পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

510 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড হানবো আমরা। চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবো ওদের সামরিক শক্তি। ধুলোয় মিলিয়ে দেবো ওদের শক্তির দম্ভকে। তারপর আর মাত্র কয়েকদিন পর যখন বাংলাদেশের মাটি থেকে শেষ শত্রটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, যখন আমাদের সোনার বাংলার মাটি শত্ৰস্পর্শের কলঙ্কমুক্ত হবে তখন আমরা কাঁদবো গলা জড়িয়ে আমাদের হারানো সাখীদের জন্যে। আমরা সেদিন চোখের জলে আমাদের বন্ধুদের শুভ্র, পবিত্র অম্লান স্মৃতিকে স্মরণ করবো। আর সবাই মিলে গড়ে তুলবো আমাদের সোনার বাংলাকে। (গাজীউল হক রচিত) বিচার চাই সারা বাংলাদেশ যখন নবলব্ধ স্বাধীনতার নবীন আভায় অবগাহন করছে ঠিক সেই সময় এক দুঃসংবাদ আমাদের সবাইকে বিস্মিত, মর্মাহত ও বেদনাত করে তুলেছে। পরাজয়ের পূর্ব মুহুর্তে পশুর চেয়েও নির্মম করেছে। এই নরঘাতকদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বাংলার প্রতিভাকে ধ্বংস করে দেওয়া। এরা বেছে বেছে হত্যা করেছে প্রখ্যাত অধ্যাপকদের, ডাক্তারদের, ইঞ্জিনিয়ারদের, সাংবাদিকদের। ঢাকা সেক্রেটারিয়েটের অফিসারদেরকেও এরা হত্যা করার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল, কিন্তু পশুদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। প্রথম থেকে এই নরপশুরা যে একটি ঘৃণ্য পরিকল্পনা হাতে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের মানুষকে, তার ইতিহাসকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, একথা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, এরা বর্ণগত ভিত্তিতে, ভাষাগত ভিত্তিতে, ধর্মগত ভিত্তিতে, সংস্কৃতিগত ভিত্তিতে ও রাজনৈতিক মতামতের ভিত্তিতে বাঙালী জাতির অস্তিত্ব পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলতে চায়। আমরা প্রমাণ উপস্থিত করেছি। আমরা বলেছি উপযুক্ত অনুসন্ধান করে আমাদের এই অভিযোগ যাচাই করা হোক। আমরা বার বার জাতিসংঘের সদস্যদের বলেছি যে, যে আইন আপনারা পাশ করেছিলেন নেই আইন অনুসারে বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা গণহত্যা। বর্ণগত ভিত্তিতে গণগত্যা চলেছে। গণহত্যা চলেছে ধর্মের নামে ভাষার নামে, সংস্কৃতির নামে। আমরা চিৎকার করে বলেছি, লক্ষ লক্ষ মানুষকে ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশে মেরে ফেলা হচ্ছে। নারীর উপর নির্যাতন চলছে, বৃদ্ধ ও শিশু পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। আপনারা গণহত্যা হচ্ছে কিনা অন্তত একবার তদন্ত করুন, একবার দেখুন আমাদের ক্ৰন্দন যথার্থ কিনা। আমরা আরও বলেছি, একই বিষয়ের জন্য দু’ধনের মানদণ্ড হতে পারে না- একথা আপনারাই একদিন বলেছিলেন। নু্যুরেমবার্গে হিটলারের সাঙ্গপাঙ্গদের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে আপনারা বিচার করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যুদ্ধাপরাধের, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধের ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের। তাদের বিরুদ্ধে আপনারা গণহত্যার অভিযোগ এনেছিলেন এবং সেই অপরাধে তাদের শাস্তিও দিয়েছিলেন। আর তখনই সেই আন্তর্জাতিক আদালতের মার্কিনী বিচারপতি কি মন্তব্য করেননি যে, একই অপরাধের জন্য বিচারের মানদণ্ড দু'রকম হতে পারে না? তিনি কি আরও বলেন নি যে, উর্ধ্বতন অফিসারের আদেশেই অপরাধ করেছি, সুতরাং আমার কোন দোষ নেই, সব দোষ অফিসারের, এ যুক্তি গ্রাহ্য নয়? তিনি কি বলেন নি যে, যে যার কাজের জন্য দায়ী হবে? সেই মহান বিচারপতি কি আরও ঘোষণা করেন নি যে আমরা এমন কোন আইন তৈরী করবো না যা আমাদের বেলায় ব্যবহার করা যাবে না? গণহত্যা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আইন পাশ করার সময় এ কথা কি ঘোষণা করা হয়নি যে গণহত্যার বিচার করার জন্য জাতিসংঘ যে-কোন ব্যবস্থা নিতে পারে এবং তার অর্থ কোন রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বোঝাবে না? সেখানে কি বলা হয়নি যে বর্ণগত, ধর্মগত, সংস্কৃতিগত কারণে কাউকে হত্যা বা অত্যাচারিত করা যাবে না? জাতিসংঘের সনদের ৯৯ সংখ্যক ধারায় জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেলকে কি ব্যক্তিগতভাবে এসব ক্ষেত্রে