পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

524 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড রেডিওর কাটা ঘোরাচ্ছে- আটটা বাজলেই কিন্তু আকাশবাণীর খবর শুনবে সবাই। আপনাদেরটা আর কেউ শুনবে না। আমাদের বার্তা সম্পাদক সুলতানা আলী। করেছিলাম তিনি হয়তো ইতিমধ্যে আবদুল কাহহারের কাছ থেকে আমরা কথা জেনেছিলেন। সুলতানা আলী আমাকে প্রচারযোগ্য দুএকটি খবরও বলে দিয়েছিলেন। হোসেন আরাকে আমি কণ্ঠ দিতে দিইনি- কেননা একটি গুপ্ত বেতার কেন্দ্রে আমাদের শ্রোতা সাধারণের জন্যে একটি মহিলাকষ্ঠের ঘোষণা বেমানান ঠেকাতে পারে বলে আমাদের ধারণা হয়েছিল। সেদিন অন্য একজন ঘোষক সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং কণ্ঠ দিয়েছিলেন- সুলতানুল আলম। তবে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র নাম ঘোষণটি সর্বপ্রথম আমার নির্বাচনক্রমে আবুল কাসেম সন্দ্বীপের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল। আবদুল্লাহ-আল-ফারুক বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেছিলেন। কবি আবদুস সালাম কথিকা প্রচার করেছিলেন। অধিবেশন চলাকালেই এসে উপস্থিত হয়েছিলেন জনাব এম, এ হান্নান। তিনি তাঁর ভাষণের পূর্বাহ্নে নাম ঘোষণা করতে বলেছিলাম। আমি বলেছিলামঃ নাম ঘোষণা না করলেই ভালো হতো, কেননা আমরা টার্গেট নির্ণয় করতে না পারে। রাডারের সাহায্যে ওরা ঠিকই ধরে নেবে- তবে এক-দু’দিন অন্ততঃ তা বিলম্বিত হবে। জনাব হান্নান দ্বিপ্রহরে স্বনামে ব্রডকাস্ট করার কথা বললে আমি বলেছিলামঃ তখন কেন্দ্রের নামকরণ হয়নি এবং অনুষ্ঠান প্রচারের ধারবাহিকতা পরিকল্পনা ছিল না। আমার উদ্দেশ্য তিনি অনুধাবন করেছিলেন এবং নাম ঘোষণা ছাড়াই তার মূল্যবান ও সময়োপযোগী ভাষণ প্রচার করেছিলেন। বেতার ভবন থেকে আমার একটি টেপ হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম। তাতে অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে রেকর্ডকৃত ও প্রচলিত গণসঙ্গীত এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুরে গীটার বাদ্য ছিল- সেই টেপটিও এই অধিবেশনে বাজানো হয়েছিল। আনুমানিক আধঘণ্টা স্থায়ী অধিবেশন শেষে বাইরে এসে আমরা ডাক্তার আনোয়ার ও তাঁর সৌজন্যে মোতায়েনকৃত জোয়ানদের কাউকে আর দেখতে পাইনি। জনাব হান্নানও তার ভাষণ প্রচারের পর চলে গিয়েছিলেন। প্রসঙ্গতঃ ডাক্তার আনোয়ারকে এরপর আর কোন দিনই বেতারকেন্দ্রে দেখতে পাইনি এবং হোসনে আরা পরবর্তীকালে পাকিস্তান বেতারে কাজ করেছিলেন। আমি, কাসেম ও ফারুক পায়ে হেঁটে রাত সাড়ে দশটায় এনায়েতবাজারে ফিরে এসেছিলাম পথটি ছিল ৭/৮ মাইল। (অংশ) -দৈনিক আজাদী, ২৬ মার্চ, বিশেষ সংখ্যা, ১৯৭