পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৫৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

525 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্মকথা মেসবাহ আহমেদ ------- বাংলাদেশে ২৬শে মার্চের সূর্যোদয় হল রক্তমানের মধ্য দিয়ে। ইথারে ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এল “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র”। ঐ সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনে মনে হয়েছিল এ একটি অল্প বিদ্যুৎ শক্তি সম্পন্ন কেন্দ্র। তখনো জানা যায়নি কে বা কারা এই অসমসাহসী যোদ্ধা যাদের উদ্যোগে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের আশা-আকাংক্ষা ও সুখ-দুঃখ-কান্নার কথা প্রথম বাতাসে ধ্বনিত হল। অবশ্য পরে আমরা এদের সন্ধান পেয়েছি। শত্রসৈন্য চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র দখল করাবার পর এই বেতার কেন্দ্রের অন্যতম বেলাল মোহাম্মদের পরিচালনায় দশজনের একটি দল চট্টগ্রাম থেকে সরে গিয়ে কালুরঘাট এক কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন ট্রান্সমিটার প্রথম স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রচার করে। এই দলে ছিলেন রেডিও ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সাকের, রাশেদুল হাসান, আমিনুর রহমান, রেজাউল করিম, শরফুজ্জামান, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, আবদুল্লা-আল-ফারুক, সুব্রত বড়ুয়া ও কাজী হাবিবউদ্দীন। কালুরঘাট পাকিস্তানী সৈন্যদের কবলে এলে পরে তাঁরা বাংলাদেশকে অন্য এক মুক্তাঞ্চল থেকে কিছুদিন অনুষ্ঠান প্রচার করেন। ২৫শে মার্চ রাজশাহী বেতার কেন্দ্রেও কয়েকজন বাঙালী কর্মী আটকা পড়েছিলেন। ২৮শে মার্চ রাজশাহী পুলিশ লাইনে পুলিশ বাহিনী ও ই-পি-আর বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে পাক ফৌজ রাজশাহী বেতার কেন্দ্রে পিছু হটতে বাধ্য হয়। একদিন একরাত পর্যন্ত কয়েকজন বেতারকর্মীকে একটি ষ্টুডিও মধ্যে আটকে রাখা হয়। মুক্তাঞ্চল থেকে স্বাধীনতার অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্দেশ্যে রাজশাহী বেতার কেন্দ্রের কয়েকজন নির্ভীক কর্মী জীবন বিপন্ন করে বেরিয়ে পড়েন বেতার ভবন থেকে। এই দলে ছিলেন অনুষ্ঠান সংগঠক মেসবাহ আহমেদ, অনুষ্ঠান সংগঠক আতাউর রহমান, অনুষ্ঠান প্রযোজক অনু ইসলাম, অনুষ্ঠান প্রযোজক শাহজালাল ফারুক এবং বার্তা সম্পাদক মোহাম্মদ মামুন। রাজশাহী বেতারের এই কর্মীদল ২রা মে মুজিবনগরে পৌছান। দু’চারদিন পরের কথা। তখন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী বেতারের অনুষ্ঠান সংগঠক শামছুল হুদা চৌধুরী এসে গেছেন। তাঁকে আমাদের মধ্যে পেয়ে আমরা আরো উৎসাহ পেলাম। ঢাকা টেলিভিশনের মোস্তফা মনোয়ার এবং জামিল চৌধুরী, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান, বিশিষ্ট সাংবাদিক এম, আর, আখতার এবং চিত্রাভিনেতা হাসান ইমাম ও তখন মুজিবনগনে। বিশিষ্ট ছাত্রনেতা এবং শেখ সাহেবের প্রেস সেক্রেটারী আমিনুল হক বাদশার সংগেও দেখা হল। আমরা সকলে মান্নান সাহবের সংগে দেখা করলাম পর পর কয়েকদিন আলোচনা হল। মান্নান সাহেবের পরিচালনায় উচ্চ বিদ্যুৎ শক্তি সম্পন্ন ট্রান্সমিটারযোগে স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান প্রচারের কয়েকটি খসড়া পরিকল্পনা প্রণীত হয়। ইতিমধ্যে ট্রান্সমিটার সংগ্রহের কাজও শুরু হয়ে গেছে। অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কেনার জন্য ১৪ই মে মান্নান সাহেব আমাদের শ দুই টাকা দিয়েছিলেন। আমি, শামসুল হুদা চৌধুরী এবং ঢাকার পাইওনিয়ার প্রেসের মালিক এম, এ মোহাইমেন এম-পি-এ