পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

41 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ফিরে আসার সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে। তিনি বলেন, শুধু সে অবস্থাতেই দেশত্যাগী লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ-শিশু স্বদেশে ফিরে আসতে পারবে। বুদাপেষ্ট শান্তি সম্মেলনে যোগদানকারী ৫৫টি দেশের ১২৫ জন প্রতিনিধি একটি বিশেষ আবেদন প্রচার করেছেন। প্রতিনিধিদের মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আইনজীবী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আফ্রো-এশীয় দেশসমূহের মুক্তি আন্দোলনের এবং গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ দেশসমূহের নেতৃবৃন্দ রয়েছেন। আবেদনে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যদানের জন্য এবং তারা যাতে মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারেন সেই অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্বের সরকারসমূহের ও জনগণের প্রতি অনুরোধ জানান হয়েছে। তারা বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য পাকিস্তান সামরিক শাসক-চক্রের কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করেছেন। বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙ্খার প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য তারা পাক সামরিক শাসকচক্রের প্রতি আহবান জানান। তারা সিয়াটো-সেন্টো জোটের মার্কিন এবং অন্যান্য সদস্যরা যাতে পাকিস্তানের সামরিক চক্রকে সাহায্য দেয়া বন্ধ করেন তার জন্যও দাবী জানিয়েছেন। বুদাপেস্ট শান্তি সম্মেলনে জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব এম. এ. সামাদ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি বর্তমানে লণ্ডনের পথে রয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিলেতের War on Want প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মিঃ ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ এবং শ্রমিক দলের পার্লামেন্ট সদস্য মিঃ মাইকেল বার্নস গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠক প্রায় তিন ঘণ্টা কাল স্থায়ী হয়। এই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতির প্রশ্নে বৃটিশ সরকারের মনোভাব সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বাং - রাজনৈতিক সমাধান বলতে বৃটিশ পার্লামেন্ট কি বোঝাতে চাইছেন সে সম্পর্কে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বৃটিশ এম, পি-র কাছ থেকে বিশদ ব্যাখ্য দাবী করে বলে জানা গেছে। বৃটিশ নেতা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খার বাস্তবায়নকেই তাঁরা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান বলে মনে করেন। বাংলাদেশ থেকে বাঙালীদের তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে একটা শাসন চাপিয়ে দেওয়ার নাম রাজনৈতিক সমাধান নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মুক্তিবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় সদর দফতর থেকে পাওয়া এক খবরে জানা গেছে যে, মুক্তিফৌজ এক প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর পাকিস্তানী সেনাদের একখানা গানবোট দখল করে নিয়েছে। গানবোটযোগে খানসেনারা টহল দিয়ে বেড়াচ্ছিল। গানবোটের আরোহী সব ক'জন খানসেনাই পানিতে ডুবে মারা গেছে। মুক্তিবাহিনী জোয়ানেরা বরিশালে একটি থানা আক্রমণ করেন এবং বাঙ্গালীর দুশমন খানসেনাদের কয়েকজন স্থানীয় দোসরকেও হত্যা করেন। রংপুর সেক্টরে পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি দল ধরলা অতিক্রমের চেষ্টা করলে মুক্তিফৌজ তাদেরকে বাধা দেয়। সংঘর্ষকালে বেশ কয়েকজন খানসেনা নদীতে ডুবে মারা যায়। একটি জীপ ধ্বংস হয়েছে। জীপের আরোহীরা গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সিলেট সেক্টরে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি কনভয়ের উপর চোরা-গোপ্তা আক্রমণ চালায়। এতে শত্রপক্ষের ৭ খানা যানবাহন ধ্বংস হয়। বিয়ানীবাজার এবং বরলেখায় মুক্তিফৌজ খানসেনাদের ১৭ জন স্থানীয় দালালকে হত্যা করেছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।