পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

55 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড অন্যদিকে যতই দিন যাচ্ছে বাংলা মুক্তিবাহিনীর আঘাত দুর্বার হয়ে উঠেছে। হানাদার শত্ররা গেরিলা আক্রমণে হয়ে উঠেছে দিশাহারা। সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সাহায্যে কয়েকদিন আগে বুদাপেষ্টে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বশান্তি কংগ্রেসের অধিবেশন। পৃথিবীর বহু দেশের প্রতিনিধিরা সেখানে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব নিয়েছেন- বিশ্বশান্তি কংগ্রেস সর্বাত্মক সাহায্য করবে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে। সুইডেনের সকল রাজনৈতিক দল যুক্তভাবে ঘোষণা করেছেন- বাংলাদেশে ইসলামাবাদের লেলিয়ে দেয়া জল্লাদদের নির্বিচার হত্যালীলা বন্ধ করতেই হবে বাংলার নির্যাতিত জনগণকে। তাদের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার অর্জনে তাঁরা জানিয়েছেন অকুণ্ঠ সমর্থন। সুইডেনের ইতিহাসে এই প্রথমবার দল-মত নির্বিশেষে সবাই এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বের শুভ বিবেকের এই কণ্ঠস্বরকে জানাচ্ছে অকুণ্ঠ অভিনন্দন। লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতাকামী জনতা উদ্দীপিত হয়ে উঠেছে- স্বাধীনতার চূড়ান্ত লক্ষ্যে আমাদের লড়াই আজ তাই সুনিশ্চিত বিজয়ের পথে। ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও ইন্দোনেশীয় পার্লামেন্টের স্পীকার মিঃ জাইচেক বিশ্ব মুসলিম সমাজের কাছে বাংলাদেশের সপক্ষে আবেদন জানিয়েছেন। বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার হানাদার সেনারা বর্বরতা ও নৃশংসতার যে বীভৎস ইতিহাস রচনা করছে- তার তিনি তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীর উপর অকারণে ইয়াহিয়ার সেনারা যে নির্যাতন চালাচ্ছে তার প্রতিবাদে আওয়াজ তোলার জন্যে তিনি আহবান জানিয়েছেন বিশ্বের সকল মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি। তিনি বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম প্রধান মুসলিম রাষ্ট্রের কর্ণধারগণ সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসীদের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছে- শাসকগোষ্ঠীর এই অমানুষিক হত্যাকাণ্ডের সমর্থন কোন বিবেকসম্পন্ন মানুষই করতে পারে না। দেশে দেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত হচ্ছে। বিবেকের কণ্ঠস্বর আজ বহু দেশে উচ্চকিত। বৃটেনের শ্রমিক দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য মাইকেল বার্ণসও বিশ্ববিবেকের সাথে ঘোষণা করেছেন একাত্মতা। বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নিরস্ত্র অসহায় জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্বরতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে যে কোন রকম সাহায্য দান বন্ধ রাখুন।” বাংলাদেশের যে সমস্ত লোক পশ্চিম পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি স্বচক্ষে তাদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন। মিঃ মাইকেল বার্নস বলেছেন, বৃটেনের জনগণ বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্পূর্ণ সমর্থন করে। ১০ জুন, ১৯৭১ হংকং-এর ফার ইস্টার্ন ইকনমিক রিভিউ পত্রিকার এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়েছেঃ দৈনিক ডন এবং দৈনিক পাকিস্তান টাইমসসহ পশ্চিম পাকিস্তানের পত্রপত্রিকা স্বীকার করেছিলেন যে প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া, শেখ মুজিবুর রহমান ও মিঃ জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় আলোচনা চলাকালে একটা সমঝোতায় এসেছিলেন। ইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষ একথা প্রচারও করেছিলেন যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী