পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

56 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের চারটি যুক্তিসঙ্গত দাবী মেনে নিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমানের এই চারটি দাবী হলোঃ এক - সামরিক শাসন তুলে নেয়া চার - সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র জনসাধারণ হত্যার তদন্ত করা। এই দাবীগুলো মেনে নেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার আগেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া নিতান্ত গোপনে ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে বিমানযোগে করাচী ফিরে গেলেন। এবং আওয়ামী লীগকে বে-আইনী ঘোষণা করে ও পূর্ব বাংলার নিরস্ত্র মানুষের ওপর সশস্ত্র সৈন্য লেলিয়ে দিয়ে ইয়াহিয়া খান বিশ্বাসঘাতকতা করলেন। এর কোনো যুক্তসঙ্গত ব্যাখ্যাও প্রেসিডেন্ট দিতে পারলেন না। এতে পরিষ্কারভাবে বোঝা গেলো যে, আলোচনার নামে সময় নিয়ে ইয়াহিয়া খান পূর্ববাংলায় সৈন্য আমদানী করলেন- যাতে বাংলাদেশের অধিকার-সচেতন মানুষ ইয়াহিয়া খানের সশস্ত্র বাহিনীর সামনে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। এ সকল কারণে ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর প্রতি সকলে সন্দেহ পোষণ করলো। ঢাকার ব্যাপক গণহত্যা পরিকল্পনায় স্বয়ং ইয়াহিয়া খানসহ পাক-সেনাবাহিনীর সব জেনারেল জড়িত ছিলো। মূলত গৃহযুদ্ধ দমনের পরিকল্পনা, তত্ত্বাবধান ও পরিচালনায় এই জেনারেলরা পুরোপুরি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। এই হত্যাযজ্ঞ কেবলমাত্র টিক্কা খানের নিজস্ব ও একক উদ্যোগ নয়- এটা আসলে খুব সতর্কতা ও সাবধানতার সঙ্গে সংঘটিত একটি মিলিটারী অভিযান। বাঙালী হত্যার সামরিক আদেশ সেনাবাহিনীর সকল ইউনিট কমাণ্ডারের কাছে যাতে প্রত্যক্ষভাবে এবং লিখিতভাবে পৌছে সেজন্য প্রেসিডেন্ট ২৫শে মার্চ বিকেল দুটো পর্যন্ত নিজেই খোঁজখবর নিয়েছেন। সন্ধ্যে সাতটায় প্রেসিডেন্ট বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে বাসভবন ত্যাগ করেন। রাত ১১টায় ট্যাঙ্ক, কামান, মর্টার গানসহ ভারী ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ শুরু হয়। জাপানের ডেলী জাপান টাইমস এক সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছেনঃ পূর্ববাংলায় পাক-সেনাবাহিনীর সশস্ত্র আক্রমণেই এই রক্তক্ষয়ী অভিযান চলছে। জাপানের আসাহি শিমবুন পত্রিকা বলেছেন, বাংলাদেশে নিহতের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও সেখানে যে নির্বিচারে গণহত্যা চলছে, তা নজীরবিহীন। পূর্ববাংলায় যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে এবং গণজীবনকে দুৰ্বিসহ করে তুলেছে তাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র ও অসহায় মানুষের প্রতি বিশ্ববাসী সহানুভূতি দেখিয়েছেন। মুক্তিকামী জনতাকে এভাবে হত্যার ফলে পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পর্ক চিরতরে তিক্ত হয়ে গেল। বাংলাদেশে ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনীর কাণ্ডকারখানার দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, পূর্ববাংলার মানুষ স্বাধীনতার জন্য অকাতরে প্রাণ দিতে পারে এবং তারা প্রাণ দিচ্ছেও। তুরস্কের ডি ডেলী জুনাইদিন পত্রিকা মন্তব্য করেছেন যে, একদিকে প্রায় এক লক্ষ সুসংগঠিত, সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য, অপরদিকে সাত কোটি নিরস্ত্র বাঙালী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সকল বাঙ্গালীকে কখনো কতল করতে পারবে না। বাঙালীর মুক্তি অবধারিত।