পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

57 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ১৭ জুন, ১৯৭১ বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বর্বরতা ও ব্যাপক গণহত্যা অপরাধকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য ইয়াহিয়ার সামরিক চক্র এক ঘৃণ্য কৌশল অবলম্বন করেছে। বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদারদের গণহত্যার ঘৃণ্য অপরাধ ঢাকা দিতে তারা “ইসলাম বিপন্ন, ইসলামী দেশ বিপন্ন” বলে ধুয়ো তুলেছে। এই ধুয়ো তুলে তারা মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশসমূহের জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করছে। “ইসলাম বিপন্ন, ইসলামী দেশ বিপন্ন’ বলে তারা ওইসব দেশের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তানের কবরে শোয়া অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছে। কিন্তু সবরকমের সাবধানতা সত্ত্বেও ইয়াহিয়ার সামরিক চক্রের এই হীন দুরভিসন্ধি ঢাকা পড়েনি। বাংলাদেশে গণহত্যার রক্তাক্ত হাত তারা লুকোতে পারেনি। গোপন করতে পারেনি তাদের জঘন্যতম অপরাধ। বিভিন্ন আরব দেশের পাঁচটি প্রভাবশালী যুব সংস্থা এক যুক্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে যে ইয়াহিয়ার সামরিক চক্র ধর্মের দোহাই দিয়ে আরব জনগণকে প্রতারিত করার যে চেষ্টা করেছিলো তা ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী বর্বর বাহিনীর আক্রমণ ও গণহত্যার প্রতিবাদে আরব দুনিয়া থেকে এটাই হলো সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বিবৃতি ও প্রতিবাদ। ধর্মের দোহাই দিয়ে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো আবার। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তথা বাঙালীদের বিপুল বিজয়ের বর্ণনা করে বিবৃত্তিতে বলা হয়েছে যে, গণনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে শাসন ক্ষমতা তুলে দেবার এবং জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পরিবর্তে পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থে ইয়াহিয়া বাংলাদেশে গণহত্যা শুরু করেছে। বাংলাদেশের জনগণের উপর গণহত্যা ও পাকবাহিনীর বর্বরতা ঐক্যের ওপর প্রচণ্ডতম আঘাত হেনেছে। আরব দুনিয়ার এই পাঁচটি প্রভাবশালী যুব সংস্থা বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ঘোষণা করেছে। বাঙালী মুক্তিসেনাদের বীরোচিত লড়াইয়ের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ঘোষণা করেছে। বাঙালী মুক্তিসেনাদের বীরোচিত লড়াইয়ের প্রতি দৃঢ় সমর্থন ও সাহায্যদানের জন্যে সংহতিমূলক প্রচার সংগঠিত করার এবং ইয়াহিয়ার জঙ্গী বাহিনীর গণহত্যার মুখোশ খুলে ধরার জন্য আরব জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছে। বিবৃতিতে আরব যুব সংস্থাগুলি দাবী করেছেন যে, বাংলাদেশে গণনির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ইয়াহিয়া ও তার জঙ্গীচক্রকে বাধ্য করে হবে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বিবৃতিতে সিরিয়ার ডেমোক্রাটিক ইউনিয়ন অব ইউথ, ইরাকের ডেমোক্রাটিক ইউথ ইউনিয়ন, ইয়েমেন গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের আসসালাফি যুব আন্দোলন, সুদানের ইউথ ইউনিয়ন,ও লেবানন ডেমোক্রাটিক ইউথ ইউনিয়ন ও লেবানন ডেমোক্রেটিক ইউথ ইউনিয়নে নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করেছেন। বৃটিশ পার্লামেন্টের শ্রমিক দলের ১২০ জনের বেশী সদস্য বাংলাদেশে গণহত্যার জন্যে ইয়াহিয়ার জঙ্গী সরকারকে এককভাবে দায়ী করে এক প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন। বৃটেনের ক্যাবিনেট মন্ত্রী জন ষ্টোনহাউজ এই প্রস্তাব রচনা করেন। এই প্রস্তাবে পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর বাংলাদেশে আক্রমণের ফলে উদ্ভূত পরিস্তিতিকে আন্তর্জাতিক শান্তির পথে মারাত্মক হুমকি ও জেনেভা কনভেনশনের পরিপন্থি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রস্তাবে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রসংঘকে হস্তক্ষেপ করার আহবান