পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

62 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড ‘ওয়াশিংটন পোষ্ট’-এর প্যারিসস্থ সংবাদদাতা জানিয়েছেন যে উক্ত বৈঠকে বেলজিয়াম, কানাডা ও বৃটেন একথা খোলাখুলিভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানীরা বাংলাদেশে যে ব্যাপক গণহত্যা, লুটতরাজ ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে তাদের জনমত প্রবল আকার ধারণ করেছে এবং পাকিস্তানকে কোন রকম সাহায্য দানের তারা ঘোরবিরোধী। অতএব নিজেদের দেশের জনমতকে উপেক্ষা করে পাকিস্তানকে সাহায্য দিয়ে বাংলাদেশে সামরিক বর্বরতা চালানোর সহযোগিতা করা তাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। -অর্থাৎ পাকিস্তানকে সাহায্যদানকারী কনসর্টিয়ামভুক্ত দেশসমূহের অভিমত হলোঃ ইয়াহিয়া ও তার জঙ্গী সরকার যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে গণহত্যা, লুঠতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতন বন্ধ না করবে, বাংলাদেশ থেকে যতদিন পর্যন্ত তাদের রক্তভেজা লোমশ হাতগুলো গুটিয়ে না ফেলবে এবং যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসবে ততদিন আমরা কেউই পাকিস্তানকে একটি কানাকড়ি পর্যন্ত দিচ্ছি না। হল্যাণ্ড সরকারও এই একই অভিমত প্রকাশ করেছেন। হল্যাণ্ডের উন্নয়ন সাহায্য সংক্রান্ত মন্ত্রী মিঃ জে, বি, উডনিক হেগস্থ পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতকে তাঁর সরকারের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেহেতু পাকিস্তানের সরকার তার নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে বর্বর বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ চালিয়ে ও শহর গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দেশছাড়া করেছে এবং যেহেতু পাক সরকার নিজেই নিজের দেশের অর্থনীতির মূল বুনিয়াদটিকেই বুলেট-বেয়োনেটের আঘাতে শেষ করে দিয়েছে, সেই কারণেই পাকিস্তানকে নতুন কোন সাহায্য দানের কথা বিবেচনা করা যায় না। মিঃ উডনিক বলেন, পাকিস্তানকে সাহায্যদানকারী কনসর্টিয়ামভুক্ত দেশসমূহের সিদ্ধান্তের সাথে অমত হয়েই তার সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, যেসব সাহায্য দেওয়ার কথা ইতিপূর্বেই হয়েছিলো তা এখন পুনর্বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।... ৪ জুলাই, ১৯৭১ ... ভাটিকানের মহামান্য পোপ পল থেতে শুরু করে জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেলে উথান্ট এবং পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষ বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে বর্বরতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, ধিক্কার আর ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার একদিকে যেমন বাংলাদেশে ব্যাপক গণহত্যা ও অবর্ণনীয় বর্বরতায় লিপ্ত হয়েছে অন্যদিকে তারা বাংলাদেশ থেকে বাইরে সংবাদ যাওয়ার সকল পথ রুদ্ধ করে চরম অপপ্রচার ও ভুয়ো কল্পকাহিনী ছড়িয়েছে। এইসব পরস্পরবিরোধী চিত্র ও প্রচারণার জন্যেই সম্প্রতি বৃটিশ পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল পাক-অধিকৃত এলাকাসমূহ এবং বাংলাদেশের মুক্ত এলাকা সফরের এসেছিলেন। এই বৃটিশ পার্লামেন্টার প্রতিনিধিদলে ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল ও শ্রমিক উভয় দলের সদস্যই ছিলেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করেছিলেন দলের প্রভাবশালী সদস্য মিঃ আর্থার বটমলি। মিঃ আৰ্থার বটমলি ছিলেন বৃটিশ কমনওয়েলথ সচিব। এখন তিনি পার্লামেন্টে শ্রমিকদলের একজন প্রভাবশালী সদস্য। ংলাদেশ সফর করে গিয়ে মিঃ বটমলি সাংবাদিকদের বলেছেনঃ ইয়াহিয়া তার সাম্প্রতিক বেতার বক্তৃতায় যে রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেছেন তা স্রেফ ধাপ্পা মাত্ৰ। ইয়াহিয়ার ওই বেতার বক্তৃতায় রাজনৈতিক সমাধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তা ছুড়ে ফেলে দেবেন। ও ধরনের প্রস্তাব বাংলাদেশে মানুষ গ্রহণ করতে পারেন না।