পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চম খণ্ড).pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ পঞ্চম খন্ড মিঃ বটমলি বলেনঃ আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমানকে বাদ দিয়ে সমাধানের দ্বিতীয় কোন পথ নেই। বৃটিশ পার্লামেন্টার দলের অন্যতম সদস্য মিঃ টােবি জেসেল ও বিশিষ্ট সদস্য মিঃ আর্নেষ্ট প্রিন্টিসও এ ব্যাপারে মিঃ বটমলির সঙ্গে একমত। মিঃ টোবি জেসেল বলেনঃ রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা বিপজ্জনক। অবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান যদি না করা হয়, তাহলে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ হতে বাধ্য। তিনি বলেন, পাকিস্তান এখন এ শতাব্দীর সবচে বড়ো দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাপক ধ্বংসের পিছনে ভারতীয় দুষ্কৃতকারীরা রয়েছে বলে পাকিস্তান যে ডাহা মিথ্যা কাহিনী ফেঁদেছিল বৃটিশ পার্লামেন্ট সদস্যগণ সকলেই তার সত্যতা অস্বীকার করেছেন। তাঁরা বলেন, রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারা বাংলাদেশে ধ্বংসের যে বীভৎস চিত্র আমরা দেখে এসেছি তা কোনক্রমেই ভারতীয়দের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। হওয়া সম্ভবও নয়।... বৃটিশ পার্লামেন্টারী দলের অপর সদস্য প্রাক্তন বৃটিশ সমর সচিব মিঃ জেমস র্যামসডেন বলেনঃ বাংলাদেশে পাক সামরিক বাহিনী যা করছে তা বীভৎস। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার কোন সম্ভবনা নেই। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এতই বিপজ্জনক ও দুর্বিষহ যে সেখান থেকে আরও অধিক ংখ্যায় শরণার্থী ভারতে বা প্রতিবেশী দেশে চলে যেতে পারে। এর ফলে শরণার্থী সমস্যা আরও গুরুতর আকারে দেখা দিতে পারে। আর তা দেখা দিলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। পাকিস্তানের পক্ষে আসবে এক দারুণ মরণ আঘাত। সে আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা পাকিস্তানের নেই। যে পাকিস্তান বর্তমানে এ শতাব্দীর সবচে বড়ো দুর্যোগের মাঝ দিয়ে চলেছে। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের ওপর জঙ্গী শাসন চাপিয়ে রেখে এর সুরাহা হবে না, হতে পারে না। মিঃ আর্থার বটমলি বলেনঃ পাক বাহিনী কেন, পৃথিবীর কোন শক্তির পক্ষেই সাড়ে সাত কোটি মুক্তি-সচেতন মানুষকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ... ৯ জুলাই, ১৯৭১ গতকাল বিশ্বজনমত অনুষ্ঠানে মার্কিন সাময়িকী নিউজউইক’-এ প্রকাশিত বাংলাদেশের ঘটনাবলী সম্পর্কিত একটি মর্মস্পশী রিপোর্টের অংশবিশেষ আমরা উল্লেখ করেছিলাম। দ্য টেরিবল ব্লাড বাথ অব টিক্কা খান” বা “টিক্কা খানের বীভৎস রক্তস্নান’ শিরোনামের এই রিপোটে নিউজউইক’ সংবাদদাতা টনি ক্লিফটন বাংলাদেশে পাক বর্বরতার একটি আংশিক চিত্র তুলে ধরেছেন। রিপোর্টে তিনি বাংলাদেশে যে মর্মান্তিক ঘটনাবলীর কথা বলেছেন সে সম্পর্কে কোন রকম মন্তব্য না করে আমরা শুধু তার বাকী অংশটুকু তুলে ধরছি। টনি ক্লিফটন তাঁর রিপোর্টে লিখেছেনঃ পাক বর্বরতার যেসব বীভৎস স্বাক্ষর আমি প্রত্যক্ষ করেছি ও পাক-হানাদারদের পৈশাচিকতার যেসব লোমহর্ষক কাহিনী আমি শুনেছি তাতে আমার শুধু একথাই মনে হয়েছে যে বাংলাদেশে কয়েক হাজার মাইলাই ও কয়েক হাজার লিডিসেস সংঘটিত হয়ে গেছে। আমার আজ আর কোন সন্দেহ নেই যে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এ পর্যন্ত এমন বর্বরতা কখনও সংঘটিত হয়নি। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং এমন কি গত দুটাে বিশ্বযুদ্ধেও একখানি বিপর্যয় কখনও ঘটেনি। আমার মনে হয়, পাক বর্বর বাহিনী বাংলাদেশে যে হাজার হাজার মাইলাই আর লিডিসেস করেছে তার শেষ এখানে নয়বাংলাদেশে আরও অনেক মাইলাই, আরও অনেক লিডিসেস অচিরেই সংঘটিত হতে যাচ্ছে। টনি ক্লিফটন বলেনঃ এইসব দেখে-শুনে আমার ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া যা হয়েছে তা যদি বলতে হয় তাহলে আমি বলবো- আমি হতবাক, স্তব্ধ হয়ে গেছি। আমি যা দেখেছি যা শুনেছি তাতে ভয়ঙ্কর এক আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে